June 14, 2009

ফেরা-২

(২)
হাল্কা নীল রঙের আলো ঘরটাকে কেমন যেন অদ্ভুত করে রেখেছে। নীলাভ কিন্তু কেমন যেন স্বর্গীয় একটা ভাব আছে। ঘরে জিনিস বলতে একটা খাট, একটা টেবিল আর একটা মানুষের থাকবার জন্যে যা প্রয়োজন তাই।

টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে, ল্যাপটপটাও খোলা। ফ্যানের বাতাসে কাগজ গুলো উড়ে যাবার চেষ্টায় রত। কিন্তু টেবিলের সামনে যে চেয়ারটা, সেটা খালি পরে আছে। কেউ যেন একটু আগেই বসেছিল ওখানে। ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দার পর্দা বাতাসে উড়ছে, হয়ত বৃষ্টি আসবে। রাত যখন খুব গভীর হয় তখন এই বাতাস যেন মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়!

আবছা অন্ধকারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেকে দেখে বিজনের খুব কষ্ট হলো। হাল্কা পায়ে হেঁটে সুমনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো বিজন।

বাবার এই আসার জন্যে সুমন যেন প্রস্তুত ছিল, ঠিক তেমন দাঁড়িয়ে ছিল তেমনি রইল সে। দুজনকেই যেন রাতের নিস্তব্ধতা ঘিরে রাখলো কিছুক্ষন। সেটাকে ভাংগলো বিজন।
- কেমন আছিস খোকা?
- ভাল আছি বাবা। তুমি কেমন আছ?
- যেমন দেখছিস ঠিক তেমন আছি। বলেই রেলিং এ থাকা ছেলের হাতের উপরে হাত রাখে বিজন। আচ্ছা তোর জয়েনিং কবে? কিছু খবর পেয়েছিস?
- এই তো আগামী মাসেই জয়েন করব। স্যাররা বলেছেন কয়েকদিনের মধ্যেই চিঠি পাঠাবেন। তোমার কেমন চলছে সব?
- হুম্ম ভাল চলছে। অফিসে নতুন কিছু ইঞ্জিনিয়ার জয়েন করেছে। তোর ব্যাচম্যাট আছে একজন। ইল্যাকক্ট্রিকাল থেকে পাশ করেছে বুয়েট থেকে। আমাকে দেখেই প্রথম দিন খুব খুশি। কি যেন ছেলেটার নাম। ও হ্যাঁ মনে পড়েছে রকিব। চিনিস নাকি?
- হুম্ম চিনি। আমাকে ফোন করেছিল।
- তোর ফিউচার প্ল্যান কি? কিছু ঠিক করেছিস?
- বাবা, আমি ভাবছিলাম এম. এস. টা করেই ফেলব কিন্তু আর কয়েকদিন পরে। এখনি নাহ।
- এই কটা’দিন কি করবি তাহলে? কোথাও থেকে ঘুরে আয়।
- ভাবছি, সব বন্ধুরা মিলে বের হব। তাই কাল সবাই এক সাথে হব।
- সেই ভাল। আচ্ছা কিছু হয়েছে তোর?

কিছুক্ষন চুপ থেকে সুমন বলল, বাবা দিন সব সময় কি আর ভাল যায়? তুমি আমার খুব ভাল একজন বন্ধু কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কথা ঠিক মনে থেকে বের হতে চায় না। মনে হয় যত মনে থাকবে ততই ভাল। কিছু কথা থাক না মনের মাঝে। কি এমন ক্ষতি তাতে?

ঠিক আছে সে না হয় মানলাম। কিন্তু বন্ধু বলে কাছে টেনে নিয়ে আবার কেন দূরে সরিয়ে নিচ্ছিস নিজেকে? কোন সমস্যা থাকলে বল। কথা বলতে বলতে দুজনই এসে ঘরে ঢুকল। বিজনকে চেয়ারে বসিয়ে সুমন নিচে ফোমের উপরে বসল।

বাবা কিছু থাকে, থেকে যায়। কিছু কিছু থেকে যাওয়া কি ভাল নয়?সুমন মাথা নিচু করে কথা গুলো বলল।
তাই বলে একটা ছোট্ট ব্যাপায় নিয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলবি? একটা জিনিস আমি তোর সম্পর্কে জানি তুই কখনো ছোট ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাস না। কিন্তু আজ মনে হল কিছু আছে ওই কার্ডে।

বাবা, আমি জানি তুমি খুব চিন্তা করছো কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। হঠাৎ করেই কেন জানি মেজাজ খারাপ হয়ে গেল! বলেই সুমন আবার মাথা নিচু করল আর সে অবস্থাতেই বলল, বাবা I am sorry।

ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল বিজন। ছেলেটা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে আছে, কিছু একটা আছে যা সে বলতে চাচ্ছে না। বিজন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। সুমনের মাথায় হাত রেখে বলল, কিছু না হলেই ভাল। তুই ও ভাল থাকিস আমরাও ভাল থাকি। তবে কি জানিস চাপা ক্ষোভ আর কষ্ট মানুষকে কষ্ট দেয়। সব কাজের পিছনেই কোন না কোন কারন থাকে। ভাল থাকে, মন্দ থাকে। তবে তোর নিজের কাজে যেন তোর সামনের মানুষটা কষ্ট না পায় সেদিকে একটু খেয়াল রাখিস। অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়। একটানে কথা গুলো বলে বিজন ঘর থেকে বের হয়ে যেতে যেতে পিছনে ফিরে তাকাল।
সুমন তখনো ঠিক তেমন ভাবেই বসে আছে। দেখে বিজনের কেন যেন খুব কষ্ট হল।

সুমন এভাবে কতক্ষন বসে ছিল নিজেও জানে না।
কি করছিলাম আমি? কার কথা ভাবছিলাম? নিজের মনে মনেই কথা বলে সুমন। আমি কি করে পারি চৈতির কথা চিন্তা করতে? আমি কি সেটার যোগ্য? কেনই বা ভাবছি?
বৃষ্টি পড়ছে। গা ঝেড়ে উঠে ঘরের দরজাটা এলিয়ে দিয়ে চেয়ারটায় প্রথমে হেলান দিয়ে বসল, একটু পরে সোজা হয়ে বসল। instrumental মিউজিক আস্তে সাঊন্ড দিয়ে ছেড়ে দিয়ে ল্যাপটপের কী-বোর্ডের দিকে হাতের আঙ্গুল গুলো চলে গেল। Google এর search box এ যেন আচ্ছন্নের মত লিখে ফেলল, Chaity Chowdhury. তারপরে এন্টার কী চেপে দিল।
(চলবে)

ফেরা

(১)
-কে রেখেছে এই কাগজটা আমার টেবিলে? কে রেখেছে?
বেশ জোরে চিৎকার করতে করতেই সুমন ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সুমন বাড়ির বড় ছেলে তাই তার সমস্যা মানেই বড় কিছু! চিৎকার শোনার সাথে সাথেই সবাই একরকম দৌড়ে এল।

একে সন্ধ্যার সময় তারউপরে হঠাৎ কি হল ভেবে নীলিমা রান্না ঘর থেকে হম্বিতম্বি করে ছুটে এল। সুমন এসে প্রথমে মায়ের সামনে দাঁড়াল। ক্ষুব্দ গলায় মাকে প্রশ্ন করল,
-মা এই কাগজটা কে আমার টেবিলে রেখেছে বলতে পার? আর রাখলেই আমার টেবিলে কেন? রাখবার কি আর কোন জায়গা ছিল না?
-খোকা, কি হয়েছে? কি আছে ওই কাগজে যে তুই দেখেই অমন চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিস? দে দেখি কি আছে ওটা তে? বলেই নীলিমা সুমনের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিল। একটা ভিজিটিং কার্ড!
কার্ডটা দেখেই মা বলল, তুই একটা আচ্ছা মানুষ খোকা! এই একটা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে বাসা মাথায় তুলতে হয়? আমি রেখেছিলাম কার্ডটা। এবার বল কি হয়েছে?

সুমন এতক্ষন চুপ করে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। শেষ শব্দটা বলার সাথে সাথেই আবার গর্জে উঠল কিন্তু এটা কেন আমার টেবিলে, আমার ঘরে থাকবে? কেন রেখেছো? কি কারনে?? কিসের প্রয়োজন এই কার্ডের?

ছেলেকে এত রাগ করতে আর কখনো দেখেছে কিনা নীলিমা ভাবল। দাদার রাগ দেখে আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকে গেল দুইভাই বোন, কাজের লোকও কাজ করতে চলে গেল। বাসার সবাই কি কারনে সুমনকে খুব ভয় পায়! ছেলেকে একরকম টানতে টানতে মা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসালো। নিজেও বসল সুমনে সোজাসুজি।
তাদের খাবার ঘরটা খুব সাজানো। সবটাই অবশ্য হয়েছে সুমনের বাবার ইচ্ছেতেই। ছিমছাম তবে আলকোজ্জ্বল। খাবার সময়টাতে বেশ আরাম করেই কেউ খেতে পারবে। এক পাশে সম্পুর্ন কাঁচের দেয়াল দিয়ে বসার ঘর থেকে আলাদা করা। হাল্কা অফ হোয়াইট কালারে নীলিমাকে একটু চিন্তিত দেখালেও ক্লান্তিটা ঠিক ধরা যাচ্ছে না। কম্পিঊটার প্রকৌশল থেকে মাত্র ৬ মাস আগে পাস করে বের হওয়া ছেলে যে কিনা কয়েকদিন পরেই বুয়েটের লেকচারার হবে কিছুক্ষন তার মুখের দিকে তাকিয়ে অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করল। তারপরে কার্ডটার দিকে তাকাল। খুব সুন্দর কার্ডটা আর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,Chaity Mazumder, System Engineer.

- এত রাগ করছিস কেন? কি হয়েছে রেখেছি তো? আজকে হঠাৎ অফিস থেকে ফেরার পথে নন্দনে গিয়েছিলাম বাজার করতে তখন দেখা হয়ে গেল। আসার সময় গাড়ীটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখন চৈতী আমাকে বাসায় দিয়ে গেল। তারপরে আমি নিজেই ওর ভিজিটিং কার্ডটা রেখেদিলাম সময় করে একটা ধন্যবাদ- মাকে কথা শেষ করতে দিল না সুমন।
- কেন? গাড়ী থেকে নামার সময় ধন্যবাদ দিয়ে আস নি? তাহলে আবার পরে ঘটা করে ধন্যবাদ দেবার প্রয়োজন পড়ল কেন?
- আরে তুই এত রাগ করছিস কেন? মেয়েটা ভাল। আর তাছাড়া আজকের দিনে কেউ কি এভাবে সাহায্য করে? পরিচিত মানুষেরাই তো কেমন দেখেও--
- তো এখন কি গুন গান করতে হবে? দেখেছো তো মাত্র এক ঘন্টা তাতেই এত? আর পরিচিত মানুষ যা করে করুক। এ করেছে ধন্যবাদ দিয়ে দিয়েছো ব্যাস শেষ। তুমি কিন্তু এখনো জবাব দিলে না কিন্তু কার্ডটা আমার টেবিলে রাখলে কেন?
- আরে না না! গুনগান করতে যাব কেন? আর কার্ডটা তোর টেবিলে রেখেছিলাম যদি তুই চিনিস ওকে তাই আর কি! ঠিক আছে বাবা ভুল হয়ে গেছে একটু শান্ত হ!
- আমার টেবিলে আর কক্ষনো বাইরে থেকে কিছু এনে রাখবে না তাও আবার যে সে মানুষের। আমি পছন্দ করি না। বলেই সুমন উঠে চলে গেল।

নীলিমা একটু অবাক আর একটু ভীত হল ছেলের কথা শুনে। আগেও তো কত কিছু রেখেছে সে কই কখনো তো এমন করেনি! আজ কি খোকার মেজাজ খারাপ? হয়তো কিন্তু কি এমন হল যে মেজাজ খারাপ হল? কোথাও কোন ঝামেলা হয়নি তো?

বিজন যখন ঘরে ঢুকল তখন ঘড়িতে সাড়ে ৯ টা। একটু দেরি হয়ে গেল তার বাসায় ফিরতে। অবশ্য তার ঘরের মানুষগুলো সবাই তার নিজের মত করে বলে এখনো ঠিক করে ঘড়ি মেপে চলতে পারছে। একটু শান্তি পাচ্ছে, না হয় তার অবস্থা ঠিক মান্নান সাহেবের মতই হত। যাহ বাবা এত কিছু ভেবে কি হবে? তার চেয়ে সে যে ভাল আছে। দুবেলা দু মূঠো অন্ন ঘরের সবাই মিলে এক সাথে খেতে পারছে তাই তো অনেক কিছু। স্ত্রী চাকরি করেন, বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হল। তার চাকরির জন্যেও ঘুরতে হচ্ছে না কোথাও। রেজাল্ট ভাল হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যাচ্ছে। আর ছোট দুই ছেলে মেয়ে দিপ আর অনু লেখাপড়াতে ভালই। কোন চিন্তা আপাতত করতে হচ্ছে না। একজীবনে আর কি চাওয়া থাকতে পারে। কিন্তু ঘরে পা দিয়েই আজ কেমন যেন লাগল। যেন ঝড় বয়ে গেছে। মাথার নিঊরন গুলো আজকাল বেশ সক্রিয় তাই সহজেই অনেক কিছু বুঝতে পারে সে আর তাই দেরি না করে ব্যাগটা রেখেই কাপড় না ছেড়ে প্রথম গন্তব্য ছোট গুলোর ঘর। ওখানে গেলেই সব খবর পাওয়া যাবে ঠিক সে জানে।
পেষ্ট কালারের ঘরে ছোট্ট দুটি খাট। একপাশে একটি পড়ার টেবিল আর দেয়ালে নানা ছবি লাগানো। দুই ভাই বোন তাদের মনের মত করে ঘর সাজিয়ে নিয়েছে। এই ঘরে ঢুকলেই কেমন জানি আবার ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে বিজনের। মাঝে মাঝে এমনি এমনি এই ঘরে এসে বসে ছোট দুটার কান্ডকারখানা দেখে। দরজাতে বাবাকে দেখেই অনু উঠে এসে বাবাকে জরিয়ে ধরল। মাথায় হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,
- মামনি, কিরে কিছু হয়েছে নাকি আজকে? এমন থমথমে হয়ে আছে কেন সব?
-বাবা জান আজ...
- এই অনু তুই না আমি বলব-দিপ বাধা দিল।
- এই তুই তো সব সময় বলিস দাদা। আজ আমি বলি না এমন করিস কেন? এই বাবা তুমি বল আমি বলব।
- আচ্ছা ঠিক আছে দিপ আজ বোনকে ছেড়ে দে। আজ অনু বলবে ঠিক আছে?
আস্বস্ত হয়ে অনু বলা শুরু করল, জান বাবা দাদা না আজ খুব রাগ করেছে। মা দাদার টেবিলে কি যেন রেখেছে আর তাই দাদা অনেক জোরে জ়োরে কথা বলেছে মার সঙ্গে। এটুকু বলেই অনু চুপ করে গেল মাকে বাবার জন্যে জল নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেই।
বিজনের জিজ্ঞাসু চোখ দেখে কিছু বলার আগেই শোনা গেল সুমনের গলা।
-মা। একটু কথা ছিল।
-হুম্ম বল।
এক লহমায় ঘরের সবার চোখ সুমনের উপরে। সুমন এক পা এক পা করে ঘরে ঢুকল। সব গুলো মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
- মা আমি ভীষন স্যরি! আমার ওভাবে তোমার সাথে কথা বলা ঠিক হয়নি। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করো না কিন্তু তোমার প্রতি একটা অনুরোধ রইল, এভাবে আমার টেবিলে আর কখনো কিছু রেখ না। প্লিজ!
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে সুমন যেমন মাথা নিচু করে এসেছিল ঠিক তেমন চলে গেল। নীলিমা- বিজন সুমনের চলে যাওয়াটা দেখছিল। এই রেশ খাবার টেবিলেও রইল কিছুটা।
রাতে ঘুমাতে যাবার আগে নীলিমা কার্ডটা বিজনের হাতে দিল। বিড়বিড় করে পড়ল সে।
- চিন্তা করো না নীল। হয়ত সুমনের মন খারাপ ছিল তাই এমনটা হয়েছে। কিছু নিয়ে খুব ডিস্টার্ব থাকায় হঠাৎ রেগে গেছে। ভেব না। ঘুমাও।
(চলবে)

May 26, 2009

বলা হয়নি!

**
ওর গায়ের গন্ধটা সব সময় শাওনের ভীষন ভাল লাগে। কাছে গেলেই কি মিষ্টি গন্ধ!! এই গন্ধের জন্যেই কিনা সব সময় অর গায়ে লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেই ইচ্ছে পর্যন্তই….. ভাবে কবে কি বলে ফেলবে, আর তাই কাছে যেতে হয় সাবধানে, সবার অগোচরে।

নীল রঙের শাড়ীতে অসম্ভব সুন্দর দেখায় তাকে। তাই যখনি শাড়ী কিনতে যাবে শাওন তখনি নজর চলে যাবে নীল রঙের শাড়ীর দিকে। একবার হয়েছে কি, পূজোর ঠিক আগে আগে সে কিছু টাকা দিল শাওনকে। টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, নাও টাকাটা দিয়ে তুমি তোমার নিজের জন্যে, আমার জন্যে আর বাসার সবাই জন্যে কিছু না কিছু কিনা নিও। কথা মত সময় করে শাওন শো-রুম গুলো ঘুরতে লাগল। শাড়ীর দোকানে ঢুকেই দুটো শাড়ী পছন্দ হয়ে গেল। টাকা গুনে দেখল ওর জন্যে যদি শাড়ীটা কিনে ফেলে তো নিজের জন্যে আর কিছুই কেনা হবে না। ধুর এত্ত কিছু ভাবার সময় আছে নাকি? নিজের জন্যে না হয় কিছুই কিনলাম না, ওর হাসি মাখা মুখটা তো দেখতে পাব। সেবার বাসায় ফিরে ওর কাছে খুব বকা শুনতে হয়েছিল কিন্তু শাড়ি গুলো হাতে নিয়ে ওর হাসি মাখা মুখটা যেন আর কিছুই মনে রাখতে দিল না। অন্যের জন্যে বেঁচে থাকাটাই যেন সার্থক হয়ে যায়।

**
রাত ৩টা বাজে। হঠাৎ মাথায় একটা হাতের স্পর্শ। নরম হাতের এই ছোঁয়াটা শাওনের খুব পরিচিত। কাজ করতে করতে টেবিলের উপর মাথাটা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছিল। হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলেই সেই মায়াভরা মুখ। দু হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে শাওন বলল, কি ব্যাপার এত রাতে উঠে গেলে যে? ঘুম আসছে না? ও বলল, আমার ঘুম ঠিক হয়েছে কিন্তু তুমি এভাবে ঘুমাচ্ছ কেন? শাওন বলল, ইস জান না তো কালকের মধ্যেই কাজ গুলো জমা দিতে হবে, কাজ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল ছিল না। কথা শেষ হতেই ও উঠে চলে গেল। আবার একটু পড়েই ফিরে এল এককাপ গরম কফি নিয়ে।
নাও কফি খেয়ে কাজ শেষ করো, ওর গলায় অর্ডার দেয়ার স্বর। শাওন চোরা মুখ করে ওর হাতটা ধরে কাছে টেনে উঠে দাড়াল, আচ্ছা ঠিক আছে কাজ শেষ করছি। কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝো আমার কখন কি লাগবে সেটা বল? ও তখন বলে, সময় হোক আগে তারপরে তুমি নিজেই একদিন বুঝবে। তবে একটা কথা মনে রেখ তুমি আমার স্বপ্ন, আর সেতা যেন কোন ভাবেই ভেঙ্গে না যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ও বলল। শাওনের মাঝ থেকে চুপিসারে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কিন্তু বুঝতে দিল না কিন্তু মনে মনে বলল, সে কি আর আমি জানি না? সে জন্যেই তো কাজ করে যাচ্ছি।
পরের দিন বিকালে অফিস থেকে ফিরে দরজায় বেল বাজাতেই ও এসে খুলে দিল খুব তাড়াতাড়ি। মনে হচ্ছিল যেন শাওনের আসার অপেক্ষায় ছিল ও। কি ব্যাপার বলো তো, এত খুশির কি হল?, শাওন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন ছুঁড়ল। তুমি ঘরে যাও আমি আসছি বলেই চলে গেল ও। শাওন একটু অবাক হল নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগটা রেখে খাটে বসল, তখন ও ঘরে এল একটা খাম নিয়ে। খামটা হাতে নিয়ে দেখল, খামেয় গায়ে নিজের নাম লেখা, আর চিঠিটা এসেছে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। খাম খোলার আগেই ও বলল, তোমার MS করার স্কলারশিপ তুমি পেয়ে গেছ, তাহলে এবার চাকরি ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি শুরু করো। ওকে আমি এত খুশি এর আগে দেখেছি কিনা আমার মনে পড়ে না।

**
টেলিফোনের রিংটা বেজেই চলছে। ঘরের মেঝেতে বসে ছিল শাওন। হাত বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করার আগেই লাইন কেটে যায়। কিরে শাওন, এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবি যেতে হবে তো আয় শেষ বারের মত একটি বার দেখে যা, বীনা মাসি বলল। শাওন উঠে দাঁড়ায় বলে, যেতে তো দিতেই হবে মাসি, আমাকে একা ফেলে কেমন করে চলে গেল বলতে পার? একবারের জন্যেও ও ভাবলো না? মাসির চোখে জল। টলমল পায়ে বসার ঘরে এল সে। ঘরের ঠিক মাঝে ও শুয়ে আছে, মাথার পাশে ধুপকাঠি জ্বলছে, মেঝ মাসি গীতা পড়ছেন। পাশে বসে শাওন বসল আর মনে মনে বলল, দেখ একবার তোমার স্বপ্ন আমি পুরন করছি এবং করে যাব। শুধু দেখার জন্যে তুমি রইলে না। অনেকক্ষন ধরে শাওন ওর দিকে তাকিয়ে রইল, হঠাৎ চোখের কোল বেয়ে নেমে এল এক ফোঁটা জল, তোমাকে কখনো বলা হয়নি ভালবাসি। আজ বলছি যদি পার শুনে নাও, মা তোমাকে আমি অনেক অনেক অনেক ভালবাসি। এভাবে তোমার মেয়েকে একা ফেলে কেন চলে গেলে? কেন? বিদায়ক্ষন চলে এল, আর শাওনের বুক থেকে চুপিসারে বের হয়ে এল, মা!

একটা প্রশ্ন আর......

ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর। আর সেই কন্ঠস্বরে কথা বলতে চাওয়ার কি অসম্ভব ব্যাকুলতা!! আমি অবাক হয়ে যাই। কেউ কারোর সাথে কথা বলতে এতটা ব্যাকুল থাকতে পারে?? নববর্ষের এই আনন্দের মাঝেও প্রিয় মানুষ গুলোকে বিশেষ দিনে কাছে না পাবার কষ্টগুলো আমাকে ছুঁইয়ে যায়। কি অদ্ভুত আমাদের সম্পর্ক গুলো। কাছে থেকেও অপরিচিত আর দূরে থেকেও কত দিনের যেন চেনা!

- কিংস এর পাশে বসে না না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার কথা ভাবছিলাম আর ফোন করছিলাম। কিন্তু কোন এক কারনে তোমার ফোন এ লাইন পাচ্ছিলাম না। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তোমার সাথে কথা বলি। কিছু প্রশ্ন এসে মনে খোঁচাখুঁচি করছিল। ভাবছিলাম তখনি করি কিন্তু করা আর হয়ে উঠে নি।
- হুম্ম বল তোমার প্রশ্ন দেখি যদি উত্তর আমার জানা আছে কিনা। যদি থাকে তো উত্তর পাবে!
- আমি জানি তোমার কাছে আমার প্রশ্নের উত্তর মিলবে। আমি অনেকক্ষন কিংসের পাশে দাঁড়িয়ে বয়ে চলা জলের দিকে তাকিয়েছিলাম। আর ভাবছিলাম, জলকে আমরা এত ভালবাসি কেন? কেন জল ছাড়া আমাদের চলে না?? বলতে পার? আমাকে জল, নদী, সমুদ্রগুলো এতটানে জান?? কেন টানে এত বলো দেখি। আমি কেন এর উত্তর খুঁজে পাই না?
- জলের একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো, জল শুধু বয়েই চলে। বয়ে চলাই তার চিরায়ত নিয়ম। কখনো ফিরে তাকায় না। যত বাধাই আসুক না কেন জল তার আপন গতিতে চলতে থাকে। উঁচু নিচু সব জায়গাতেই স্রোত একি ভাবে চলে। আমরা সেটা পারি না। আমরা দুঃখ কষ্টে ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু জল, সে কখনো ভেঙ্গে পড়ে না। নুড়ি, পাথর কত কিছু জলের চলার পথে থাকে। কিন্তু সে কারোর বাধা মানে না। নদীর জলের কথাই ভাব, কি সুন্দর বয়ে চলে। আর এই যাবার পথে দুকুলে কত কি না দিয়ে যায়। কখনো প্রাচুর্য আর কখনো দরিদ্র করে রেখে যায়। কিন্তু যেটা করে সেটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই জলের। সমুদ্র কত বিশাল দেখ!! তুমি, আমি অথবা আমরা কি কখনো পারব এতটা বিশাল হতে?? কত কিছুকে জল তার নিজের মধ্যে ধারন করেছে, কত মুল্যবান জিনিস, কত জীবন। জল কি তাদের দিক থেকে একবারের জন্যেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? নেয়নি, বরং পরম মমতায় নিজের মাঝে আগলে রেখেছে।
- আর?
- আর?? আর আমাদের চোখের জলের কথা বললে বলা যায়। কষ্ট পেলে আমরা কাঁদি। আর আমাদের কষ্ট গুলো জল হয়ে আমাদের কিছুটা হাল্কা করে দিয়ে যায়। এই যে পৃথিবীতে আমরা আছি, ভেবে দেখ আমরা কি কেউ কারোর জন্যে থেমে আছি? আজকে কেউ মরে গেলে, কালকেই আমাদের মনে তার কথা ফিকে হয়ে আসে সে যত আপনি হোক। জল ও তেমন, কারোর জন্যে থেমে থাকে না। বৃষ্টি তো তোমার খুব ভাল লাগে। বৃষ্টির আগে আর পরে কখনো প্রকৃতিটাকে দেখেছো?
- কেন বলতো?
- গাছে লতায় পাতায় বৃষ্টি হবার আগে অনেক ধুলোবালি জমে থাকে। শুধু গাছেই না, পুরো বায়ুমন্ডল কি রকম উত্তপ্ত থাকে দেখেছো? আর বৃষ্টি হবার পরে সব কিছু অনেক পরিষ্কার হয়ে যায়। যেন নতুন রূপে সাজে প্রকৃতি। জল যখন উপর থেকে পরে তখন সোজা নিচে চলে যায় আর যাবার পথে সব কিছুকে শুদ্ধ করে দিয়ে যায়। অই গল্পটা পড়েছো, যেখানে গঙ্গাতে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যায় বলা আছে। ওই যে শিব আর পার্বতী মিলে মানুষকে পরীক্ষা করতে আসে।
- হুম মনে আছে। মনে বিশ্বাস থাকলে পাপ দূর হয়ে যায়, গঙ্গার জলটাও সেই বিশ্বাস এরই একটা অংশ।
- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। আর এই জন্যেই মনে হয় জলকে আমরা এত ভালবাসে। যে কিনা নিজে নিম্নগামী হয়েও অন্যদেরকে পবিত্র করে দিয়ে যায়। বলে যায় নিচে যাওয়াটা অনেক সহজ কিন্তু উপরে মাথা উঁচু করে থাকা অনেক কষ্টের। মাটিতে পা রেখেই তবে উপরে তাকাতে হয়। এবার তুমি ভেবে দেখ কেন তোমার সমুদ্র, জল, নদী এত টানে।
- বুঝতে পেরেছি আমি। দেখেছো আমি বলেছিলাম তোমার কাছেই আমার উত্তর আছে। তুমি কি সুন্দর উত্তর দিয়ে দিলে আর আমিও পেয়ে গেলাম।

আর অনেক কথার পরে, আমাদের কথা শেষ হল। ভাবছেন কার সাথে কথা বলেছি? এ আমার খুব ভাল একটা বন্ধু, যে কিনা সব সময় ভাবে আমার কাছে তার সব কথার উত্তর আছে। জানি না ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পেরেছি কিনা। তবে চেষ্টা করেছি নিজের মত করে বুঝিয়ে দিতে। কারন মাঝে মাঝে আমাকেও ওর করা এই প্রশ্নটি খুব ভাবায়।

শব্দ চোর!

লেখালেখিটা কোন ভাবেই continue করতে পারছি না বেশ কয়েকদিন ধরে। হয় আমার গনকযন্ত্র মহাশয় রাগ করেন না হয় ব্যস্ততা। সব কিছুকে একদিকে রেখে যেই লিখতে বসেছি তখনি দেখছি মাথায় লেখার আইডিয়া তো আছে কিন্তু কোন শব্দ মাথা থেকে বের হয়ে ঠিকঠাক মত কিবোর্ড হয়ে গনকযন্ত্রের পর্দায় ভেসে উঠছে না। যা উঠছে তাও ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ডায়েরীটাও ঠিকঠাক মত লিখতে পারছি না। কি হয়েছে আমার??

কারন খুঁজতে গিয়ে আবিস্কার করলাম, কিছু শব্দ আমার চুরি গেছে!! আর কিছু শব্দ আমার সাথে অভিমান করেছে!! অভিমানির অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছিলাম আর করতে করতেই আজকের এই লেখাটা লিখে ফেললাম কিন্তু যে গুলো চুরি গেছে সেগুলোর কি করি?? মহা ভাবনায় আমি। শেষ পর্যন্ত কিনা IC, Circuit ছেড়ে দিয়ে আমাকে চোর ধরার কাজে নামতে হবে?? এ কেমন পরিহাস! এই ছিল আমার অদৃষ্টে?

কি আর করা আমি বের হলাম আমার শব্দ গুলো খুঁজতে। যত যাই কিছু হোক না কেন নিজের জিনিস নিয়ে তো আর অবহেলা করা যায় না। চোর খুঁজতে বের হয়ে আমার ত্রাহি অবস্থা!! এদিক খুঁজি পাই না। সেদিকে কাউকে জিজ্ঞেস করি বলে দেখে নাই। কি মুশকিল এখন আমি কি করি?? দিন পেরিয়ে রাত আসে। রাত গভীর হয় আর সপ্তাহের শেষের দিন গুলো শেষ হবার পথে.........কিন্তু আমি একটা বর্ণও লিখি নি। এরকম সময় আমার আর কখনো গেছে কিনা সন্দেহ। কি যে কষ্ট লাগছিল বোঝাতে পারব না।

অনেক রাতে একজনকে বললাম, জান আমার শব্দ গুলো হারিয়ে গেছে। কিছুই লিখতে পারছি না। এমন আমার কখনো হয়নি। আমার মন খারাপ দেখে উত্তর দিল, তুমি ঠিক ঠিক খুঁজে দেখেছ? কি লিখবে আমায় বল দেখি আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারি কিনা। আমি বলি, না লাগবে না, আমি আরো খুজে দেখি তুমি বরং থাক। সে বলে, আচ্ছা আমি আছি। কিছু করতে পারলে বলো। বলেই একটা হাসি দিল!! আমি এদিকে কষ্টে আমার শব্দ গুলোকে খুঁজছি আর উনি এখানে হাসছেন। আমার কষ্ট আমি কোথায় রাখি আর............

হঠাৎ মনে হল শুধু কি শব্দ হারিয়েছে?? চোরটা আর কিছু নিয়ে যায়নি তো। আর তারপরেই দেখলাম আরো কিছু জিনিস আমার হারিয়ে গেছে। নতুন কিছুও আবার এসেছে আমার কাছে! কি অদ্ভুত!! এমনো হয় কিছু চুরি হয়ে যাবার পরে তা আবার নতুন কোন কিছু দিয়ে পুরন হয়ে যায়?? জানা ছিল না!!

যাই হোক শেষ পর্যন্ত আমি আমার শব্দ চোরকে ধরতে পেরেছি কিন্তু আমার শব্দ গুলো এখনো ফেরত পাই নি। কারন চোরটা বড় বাঁদর আর একটু ত্যাদোঁড় ও বটে। তবে আমি শব্দ গুলো ফিরে পাবার আপ্রান চেষ্টা করছি। দেখি কি হয় শেষ পর্যন্ত বাঁদরটা শব্দ গুলো বিনা শর্তে ফেরত দেয় কিনা!!

March 01, 2009

শুরুতো হলো, এবার?


চারদিকে থই থই জল, এর মাঝে একজন প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন। পাশে শুধু ডাক্তার আর একজন নার্স। স্বামী মানুষটি বাইরে অপেক্ষা করছেন। বাইরে বন্যার জল, আর থেমে থেমে বৃষ্টি। এর মধ্যেও বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। প্রসব বেদনায় কাতরানো মহিলাটি নিজে একজন ডাক্তার, মফস্বলে তার পোষ্টিং, যেখানে তার শ্বশুর বাড়ী। বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি খবর পেলেন ছেলে লোক পাঠিয়েছে যাবার জন্যে। ভদ্র মহিলাটি না গিয়ে লোক মারফরত খবর পাঠালেন, যদি ছেলে হয় তবেই তিনি দেখতে যাবেন নচেৎ নয়।
সংবাদ বাহক যখন খবরটি মহিলাটির স্বামীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল তখন সদ্য মা হতে যাওয়া মানুষটাও কথাটা শুনতে পায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলে, মেয়ে হোক অথবা ছেলে তাকে মানুষের মত মানুষ করে তুলবে সে। মেয়ে হলে তাকে পৌছে দেবার চেষ্টা করবে সফলতার চুড়ায়। যেন আজকে যে মানুষ গুলু তার অনাগত সন্তান কে এত কথা বলছে তারাই কাল তাকে নিয়ে গর্ব করবে, তার পরিচয়ে পরিচিত হবে। প্রতীক্ষার অবশেষে ছোট্ট একটা প্রান চিৎকার করে জানিয়ে দিল, আমি এসেছি। তার স্বামীর নির্দেশে লোক লজ্জার ভয়ে মেয়েটার শ্বাশুড়ি শেষ পর্যন্ত এসেছিলেন, হাজার হোক বংশের প্রথম সন্তান বলে কথা। কিন্তু ঐ যে মেয়ে, সেটা ভুলে যেতে না পারলেন শ্বাশুড়ি, না পারলেন সদ্য পৃথিবীতে আসা মেয়েটার বাবা। আজকে এই আমি, অনুসুয়া সেদিনের সেই মেয়ে, অনাহুত কিন্তু মায়ের স্বপ্নে লালিত।
মেয়েরা নাকি বাবা ঘেঁষা হয়। আমি তার উলটো। আমি মা নেওটা। বাবা অনেক চেষ্টা করতেন তার এই অনাহুত মেয়েটার প্রতি বিরাগ ভাব না দেখাতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথাও না কোথাও ধরা পড়ে যেতেন। বড় হতে হতে যেন মেনেই নিয়েছিলাম এই “অনাহুত” শব্দটি। আমার মেরুদন্ডটাকে শক্ত আর খাড়া রাখার জন্যে ওই একটা শব্দই যেন যথেষ্ট! কিন্তু মায়ের স্বপ্ন দেখা মন আমাকে দিয়েছে অন্যরকম হবার প্রেরনা, একটু আলাদা। তারপরেও আজকাল মনে হয় আমি খুব সাধারন। আমার মধ্যে কোন বিশেষ বলে কিছু নেই। আমি খুঁজে চলেছি সোলমেট, কিন্তু তারপরেও যখন খুব কাছেও বন্ধুরা বলে মানুষটা তো ৪ ফূটি কি দরকার এত বড় স্বপ্ন দেখার? একটু আস্তে পায়ের নীচে দেখ মাটি আছে কিনা এরকম হাজারো কথা।
কিন্তু আমি জানি, বিশ্বাস করি, আমার পায়ের নীচে মাটি আছে। আকাশে আমার মনটা অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেও আমি জানি আমার পা দুটি কখনো কাদা মাটিতে কখনো শক্ত-তপ্ত মাটিতে আছে। মনটা কে এখন এতটাই শক্ত করে ফেলেছি যে আজ আর চেনা শোনা মুখ, প্রিয় মানুষ গুলো, কাছের মানুষ গুলো যখন আমার মনের আকাশে মেঘ জমিয়ে দেয় তখন আর আগের মত মন খারাপ হয় না। ছোট ছোট নুড়ি পাথরের মত দিন গুলো পার হয়ে যায়। আমার কাজে দিন গুলো যেন আরো রঙ্গিন হয়ে উঠে আর আমার প্রিয় মানুষ গুলোর মুখগুলো ভরে উঠে অদ্ভুত এক আলোয়। এ কি আমি কখনো কিনতে পারব? না এমনি এমনি দেখতে পাব! এগুলো আমার কাছে অমুল্য। রঙ পেন্সিল, জাহাজের ডাক, জমকালো রাতের তারারা যেন আমার ফেরারি মনকে স্বপ্নের দেশে নিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশী আর কি চাই?
ভাবছিলাম আমার গল্প বলব আপনাদের সবাইকে। কিন্তু দেখলেন তো শুরুটা কি রকম এলোমেলো হয়ে গেল। গল্পের শুরু করব কিভাবে তাই বলতে গিয়ে একগাদা অগোছালো কথা বলতে হল। ভীষন স্বপ্নবাজ আমি, আমার লেখিকা বন্ধুটি শিখিয়ে দিয়েছিল একদিন কি করে স্বপ্ন দেখতে হয়! আর বাস্তব পরিস্থিতি শিখিয়ে দিয়েছিল শত বাধা, কষ্ট সত্বেও কি করে স্বপ্নে বাঁচতে হয়, কি করে বেঁচে থাকতে হয়। জানি না আমার গল্প আপনাদের ভাল লাগবে কিনা। তারপরেও বলে যাওয়া। টুকরো টুকরো ঘটনা আর কল্পনার পাখনা জানি না আপনাদের আমার সাথে উড়িয়ে নিতে পারবে কিনা। আজ বিদায় নিচ্ছি। হয়ত আবার দেখা হবে।

এটাকে কি শুরু বলা যায়?



হাল্কা রোদের মাঝে ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বাতাসটা এত মৃদু যে, রোদের তাপটা গায়ে লাগতে পারছে না। রাস্তাটাও খুব নীরব, আশেপাশে মানুষজন খুব কম, যারা আছে তারাও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। এক পশলা ধুলোবিহীন বাতাস এসে লাগল মুখে, পাশাপাশি হাঁটছি আমরা দুজন। এর আগেও আমরা হেঁটেছি, কথা বলতে বলতে হাঁটা। একটা পলাশের গাছের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক আমার লেখিকা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি অত ভাবছ বলত? পলাশের দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছ যে?
বসন্ত এসে গেছে প্রকৃতিতে, ওই যে দেখ! সত্যি ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক বসন্ত এসে গেছে। একটু হেসেই বলল, ভাবছিলাম তোমার কথা, তোমার গল্পের কথা। শুরুটা করব কিভাবে?
আমার জোরে হাসি শুনেই বলল, আরে বাবা রাস্তায় দাড়িয়ে আছ তাও কি মনে করিয়ে দিতে হবে নাকি? ? খুবতো বললে গল্প শোনাবে, এবার শুরুটাও শুরু করে দাওতো। হাল্কা অভিমানি সুর।
না না তা হবে না। আচ্ছা তোমার শুরু কোথা থেকে?
আমার জন্ম থেকে। কিন্তু আমি সেভাবে শুরু করতে চাই না। তোমার পল্পটা একটু অন্যভাবে শুরু হোক, একটু আলাদা ভাবে। সবার চেয়ে আলাদা তুমি। আচ্ছা তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয়টা কবে হয়েছিল বলতে পার?
হুম্ম খুব আছে। আমি মাথা নিচু করে বলি।
তখন আমি মনে হয় স্কুলে পড়ি। আমার লেখিকা বলে।
না না। স্কুলে না ভুল বললে। তোমার এস. এস. সি. পরীক্ষার পরে। স্কুলে আমি তোমার সাথে পরিচয় হতে চেয়েও আমি পারিনি। তুমি আমার দিকে কখনো ফিরেও তাকাতে না। খুব কষ্ট হতো তখন। তোমার উপযুক্ত হয়ে উঠতে কত না চেষ্টা করেছি আমি, একটানে বলে গভীর নিশ্বাঃস নেই আমি আর তুমি যে বললে পরিচয়ের কথা সেটা এর মধ্যে হয়ে গেছে। এবারতো শুরু করার পালা গল্প।
একটু ফাঁকা একটা জায়গা দেখে বসে পড়ি আমরা দুজনে।
একটা সময় ভাবতাম আমাকে দিয়ে বুঝিবা কিছুই হবে না। যখন পৃথিবীতে আসি তখন থেকেই নিজেকে সব সময় অনাহুত হিসেবেই পেয়ে এসেছি, দেখে এসেছি। তোমাকে দেখে আমি আবার আমাকে খুঁজে পেয়েছিলাম। স্বর্ণলতার মত তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে উঠার চেষ্টা করতে শুরু করলাম। একটা বইয়ের দোকানে তুমি বই খুঁজছিলে। আমি একটু সুযোগ পেয়ে তোমার কাছে গিয়ে তোমায় বললাম, তিন গোয়েন্দার বই পড়তে পার। তূমি আমার দিকে তাকিয়ে বললে, তোমার যা ভাল লাগবে সেটা আমারও যে ভাল লাগতে হবে তার কোন মানে নেই। আমার রবি ঠাকুরের “ডাকঘর” ভাল লেগেছে আমি ওটাই নেব। তুমি চাইলে এটা কিনতে পার। আমি সেদিন কোন বই কিনিনি। বলেছিলাম, তোমার একটু সময় হবে? যদি কিছু মনে না কর তো একটু কথা বলব। তুমি সেদিন না বলনি আর তাই আমি আজ তোমার সাথে। তারপরে কিছুক্ষনের নীরবতা।
একটু পরেই আবার, তুমি অনেককিছুই জান না। তোমার সাথে আমার কথা বলার যে কি আগ্রহ ছিল বলে বুঝাতে পারবো না। ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে আমি বন্ধুত্ব করব। তুমি আমাকে যেন চিনতেই না! সেদিন কথা বলতে বলতে বুঝেছিলাম আকাশের মত তুমি, নদীর জল যেমন করে বয়ে চলে ঠিক তেমনি তুমিও বয়ে চল আর আমাকেও তুমি ভাসিয়ে নিয়ে গেছো তোমার স্রোতে। গাছে ফুল ফোটে আবার ঝরেও যায়। তুমিও ঠিক ওই ফুলটার মত, কিন্তু তুমি ঝরে গেলেও মনে একটা গভীর ছাপ রেখে যাও এবং তুমি আমাকেই এটা শিখিয়ে দিয়েছো এত দিনে। মনের কথা গুলো কাউকে বলার সুঝোগ হয়ে উঠেনি। ভাবতাম কি করে বলতে হয়। কিন্তু ওই ভাবনাতেই আমার সারা, মুখ ফুটে বলা হয়নি।
আবার আমরা হাটঁতে শুরু করেছি আমরা। মাথার উপর দিয়ে একটা প্লেন ঊড়ে গেল। তোমার মনে আছে আমরা দুজনেই ভাবেছিলাম ওই আকাশে উড়াল দেব। আকাশে নিজেদের ঘর বানাবো। তুমি স্বপ্ন দেখতে আর আমাকেও দেখাতে। ধানের খেতের মাঝের চিকন আইল ধরে অনেকটা পথ হেটেছি আর অনুভব করেছি প্রকৃতি কথা, সুর। কখন যদি ভুলে আমাদের আড়ি হয়ে যেত তুমি আথবা আমি যে কেউ গিয়ে আগে কথা বলতাম। হা হা হা হা হা।
আড়ি আড়ি/ বন্ধু তোমার সাথে আড়ি আড়ি/ বড্ড তোমার তাড়াতাড়ি/ তুমি থাক না অবেলায়/ আমি একা জানালায়, সন্ধের আগে সুর্যের মত পশ্চিমে দাও পাড়ি। বিড়বিড়ি করে গেয়ে উঠি দুজনে।
বন্ধুত্ব টা আসলেই আমাদের ওরকম। পাশাপাশি হেটে চলা, ঠিক যেন ছায়াটি। আচ্ছা অনেকটা তো হল আমার কথা বলা। এবার বলতো তোমার গল্প, লেখিকা শুধায়।
আমি বলি বন্ধু তুমি যার নাম দিয়েছ অনুসুয়া তার গল্পটাতো এভাবেই শুরু করতে হবে। রঙ জিনিসটা চিনতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। গাছের নিচে বসে অলস সময় কাটানোটা আমার জন্যে ক্লান্তির কাজ ছিল। পথ ছিল, রথ ছিল, চলে যাওয়া ছিল কিন্তু কিভাবে পথিক হতে হয় জানা ছিল না। পথে হাজারো মুখ ছিল তার আড়ালে ছিল হাজারো সুখ-দুঃখের সাতকাহন। কিন্তু এর মাঝে চেনা স্পর্শ গুলোকে চিনতে আমার সময় লেগেছিল। হাসির আড়ালেও যে একটা নিস্তব্ধতা থাকতে পারে বুঝিনি অথবা বুঝতে চাইনি। পাথর হয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে এসেছি। জোনাকির আলোতে মনকে হারিয়ে ফেলি, আবছায়া জানালার কাঁচে আজ আমি রূপকথার ছবি আকিঁ। ছলছল হাওয়ায় খুঁজে ফিরি পুরানো আঙ্গুলের ছোঁয়া। কি পারবেতো এবার আমার গল্পের শুরুটা করতে?
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যাই আমরা, হয়ত সেই জমকালো চাঁদের দেশে। মন হয়ে যায় ফেরারী, কে জানে হয়ত বেজে গেছে টেলিফোনের ঘন্টাটা!

February 28, 2009

Bangladesh On Crisis


গনকবর

গনকবর

wating for their nearest one

.............

crying for dearest one

গনকবর

people are working to find out ARMY officers










February 27, 2009

আমার গল্প .....................


আমি সদ্য কৈশোর পেরুনো এক কন্যা। স্বপ্ন দেখতে আমি খুব ভালবাসি, ভালবাসি কুয়াশার ভোরে শিউলি ফুল কুড়ানো, প্রচন্ড রোদে পিচ ঢালা পথে হেঁটে চলা আর উরন্ত বলাকা। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন আমি উরন্ত বলাকার হব। আকাশ ছেড়ে পারি দেব আকাশের অপর প্রান্তে। আমি মানুষটা শুধু চার ফুট ১০ ইঞ্চি, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। কৃষ্ণ আমার প্রানের সখা। মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে বয়ে চলা উদ্দাম বাতাসে এলোচুল খুলে দৌড়তে আমি খুব ভালবাসি। কখন আপনারা অনেক তারাভরা আকাশের নিচে নদীর বয়ে চলা দেখেছেন? অথবা দেখেছেন বিষন্ন কোন বিকেলে নদীর মাঝে বসে তার ঠিকানাবিহীন বয়ে চলা? আমি দেখেছি, না না আমি অনুভব করেছি। হৃদয় দিয়ে ধারন করেছি বাতাসের গন্ধ, তাদের না বলা কথা, দূর থেকে ভেসে আসা কোন সুরের মুর্ছনা। পাগল ভাবছেন আমাকে? হুম্ম একটু পাগল আছি বটে কিন্তু তারপরেও আমার আশেপাশের মানুষ গুলু আমায় এত্ত ভালবাসে যে আমি অবাক হয়ে যাই। যদি আপনাদের সদয় অনুমতি পাই তবে মাঝে মাঝে এসে আপনাদের আমার গল্প শুনিয়ে যাব। আমার কথায় কথায় আপনাদের নিয়ে যাব হয়ত কখনো অনুভব না করা, হয়ত না ছোঁয়া কোন প্রকৃতির বুকে, না দেখা একটা দেশে, স্বপনের দেশে যেখানে বাস্তবতা বড় নির্মম। কি যাবেন তো আমার সাথে?

ইশ দেখুন তো কান্ড? আমি এখন আমার নামটাই আপনাদের জানাই নি। আমি?? কি নাম দেই বলুন তো? আচ্ছা আমার নাম আজ দিলাম আমার লেখকের এবং তার সবচে ভাললাগা মানুষের প্রিয় নাম অনুসূয়া। ভাবছেন আমার অন্য দুই সখি কোথায়? আরে আমি কি শকুন্তলার সখি নাকি? হুম্ম তবে আমার সখি আছে, চারপাশে অনেক মানুষ আছে, না বলা অনেক কথা আছে, একটা ঠিকানা আছে, একটা ভোরের অপেক্ষা আছে আপনাদের সবার মত। সকালে জেগে উঠা নতুন সুর্য, দিনের পাখিদের ছুঁইয়ে যাওয়া, গোধুলীর আলোর মিষ্টি হাসি, একলা চাঁদ সাথে একলা রাত। অনুমতি পেলে এখন থেকে সব কিছুর নির্জাস আমরা সবাই একত্রে নেব। জানিয়ে দেব আমার না লেখা কোন চিঠির একা ডাকবাক্সে পড়ে থাকার গল্প, একা চিঠি আর একা থাকা সুর, অজান্তে ছুঁইয়ে যাওয়া কারোর চোখের নীল, ইথারে ভেসে আসা কোন ভাল লাগার গল্প। শুধু এখন অপেক্ষা আপনাদের অনুমতির। কি পাব তো? গল্পের নামটা আপনার অনুমতি দিলে পরেই দেব। আমি অপেক্ষায় রইলাম……………..

ব্যস্ত দিনের কথাঃ৩

আজকাল বড্ড বেশী ঘুম কাতুরে হয়ে গেছি আমি। খালি ঘুমাতে ইচ্ছে করে। সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যে একবার মামনি, একবার বাবা, একবার দাদা ফোন করে। আমি এই উঠছি বলে আবার ঘুমিয়ে পরি। আশার কথা যে এই সেমিস্টারে আমার সকালে ক্লাস মাত্র একদিন, রবিবার। আর ছুটি?? বলব না। কারন শুনলে আপনারা জেলাস ফিল করবেন। তবে ছুটির দিন গুলোতেও আমি ব্যস্ত থাকি কোন না কোন কাজে।
আজকে বসে বসে লিস্ট করছিলাম কি কি এখন ব্লগার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করিনি। লিস্ত এর মধ্যে প্রথমে ছিল স্বরস্বতি পুজা, তারপরে বসন্ত আর তারপরে ভালবাসা দিবস। তারপরে যেটা ভাবলাম সেটা হল কে কি লিখেছেন পড়া হয়নি। এক সপ্তাহ কম কথা! আর আমি যা আলসেমি শুরু করেছি কোনটা রেখে কোনটা পড়ি?
আজকে সারাদিন বসে বসে খালি গান শুনেছি। আমার সব সময়ের সঙ্গী মিউজিক সেটা গান হোক অথবা ইন্সট্রুমেন্টাল, বই আর মাঝে মাঝে আমার 6B পেন্সিল। যেটা বলছিলাম একটার পর একটা গান শুনেই চলেছি। বিকাল পর্যন্ত শুনেছি রবীন্দ্রনাথের গান তাও আমার প্রিয় শিল্পী বন্যা দি’র কন্ঠে। আজকে আমার সংগ্রহে থাকা প্রায় অনেক গুলো গান শুনেছি। গান শুনতে শুনতে ভাবছিলাম যে পড়া নিয়ে বসবো।কিন্তু কিসের কি! মডার্ন ফিজিক্সের বই বাদ দিয়ে নিয়ে বসলাম উপন্যাসের বই নিয়ে। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের “অন্য বসন্ত”র প্রথম গল্পটা শেষ করলাম। আমার পড়ার টেবিলে এখন ৩টা বই পড়ে আছে, আর রুমমেট দেরও কিছু বই আছে। অনেক বই জমে গেছে তার উপরে বই মেলা থেকে কেনা বইতো আছেই! আমার রূমমেট গুলা মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করলেও আমাদের একটা দিকে খুব মিল আর সেটা হল বই পড়া। একদিন আমি কি যেন কাজ করছিলাম, হঠাৎ শুনি কে যেন কাঁদছে। অনেক রাত তখন, প্রথমে পাত্তা দেইনি কিন্তু একটু পরেই শব্দটা একটু বাড়তেই পিছনে ফিরে দেখি আমার এক রুমমেট কাঁদছে! কি রে কি হয়েছে? চিন্তিত আমরা অন্য দুজনের প্রশ্ন। তখন দেখি সে বই পড়ছে আর কাঁদছে। বইটা সম্ভবত ছিল আনিসুল হকের “মা”। এমনি অনেক ঘটনা আছে আমার রুমে! এবার যা নিয়ে কথা বলছিলাম সেখানে ফিরে আসি। গান শুনছিলাম, এখনো শুনছি। তবে এখন শুনছি গজল তাও আবার জগজিৎ সিং এর। তাও আবার প্রিয় একটা গান, সরকতি যায়ে রুখ সে নাকাব আহিস্তা আহিস্তা, নিকালতা রাহা হে আফতাব আহিস্তা আহিস্তা। সুরটা প্রচন্ড প্রিয়। তবে একটা গানেই বার বার আমি আটকে যাই,
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুল গুলি ঝরে,
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি তোমার চরনে দিয়েছি….
কি কারনে জানি না তবে রবিঠাকুরের এই গানটা আমার খুব ভাল লাগে। চেষ্টা করি একবার হলেও শুনতে। মন খারাপ বা কোনকিছু করতে পারছিনা তখনি আমার আশ্রয় রবিঠাকুর। আজকে গানটা শুনতে শুনতে অনেক পিছনে চলে গিয়েছিলাম। মনে পরে গিয়েছিল প্রথম ভাললাগার কথা। সেকথা না হয় পরে অন্যকোন একদিন শোনাব আপনাদের। কি যে জাদু আছে রবিঠাকুরের লেখায় আমি জানি না। কিন্তু চুম্বকের মত খালি আমকে টেনে ধরে। বাঙ্গালী মাত্রেই মনে হয় রবিঠাকুর টানে।
পড়তে বসেছি কিন্তু চোখের সামনে ফেসবুকের পেইজ টা খোলা। বন্ধুদের বসন্তের ছবি গুলো দেখছিলাম। খুবই সুন্দর!
এর মাঝে আমরা রুমমেটরা বই নিয়ে সমালোচনা করে গেলাম। কোন বই কেমন! এভাবেই চলে গেল আরো একটা দিন!
অথচ ব্যস্ত দিন গুলোতে কি যে কষ্ট হয়! ক্লাস, পড়া, পরীক্ষা। কিন্তু সপ্তাহ শেষের দিন গুলো এলেই আমার কেন জানি ভাল লাগে না। খালি ঘুম আসে। আমার এক রুমমেটতো প্রায়ি বলে, কি আছে জীবনে এই ঘুম ছাড়া! শুনে আমরা হাসলেও কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। ঘুম, কাজ, ছুটে চলা প্রতি মুহুর্তে আর খাওয়া এই হল আমাদের জীবন। তারপরেও একটু হাসি একটু কান্না, একটু বিষন্নতা, টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা, মজা যেন বেঁচে থাকার লোভকে বাড়িয়ে দেয় হাজার গুন!

February 26, 2009

কি দেই এর শিরোনাম?

অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। ভাবছি কিছু লিখব। আজ ওই ভাবনাতে আমার শেষ। সেটা কীবোর্ড দিয়ে আর মনিটরের পাতায় লেখা হচ্ছে না। সাজছে না নতুন কোন রুপে। লিখব তো ঠিক আছে কিন্তু কি নিয়ে লেখা যায়? ভাবছি, একের পর এক আইডিয়া আসছে মাথায়, ওই মাথাতেই থেকে যাচ্ছে। ঠিক যেন মনের মত হচ্ছে না। তাই ভাবলাম আমার এই না লিখতে পারার অপারগতা নিয়েই আজ লিখব। কিন্তু তাতেও আমার অস্বস্তি, লিখব কি লিখব না। লিখতে গিয়েও কয়েকবার থমকে গিয়েছি, মুছে দিয়েছি, আবার শুরু করেছি, আর নিজেকে শাসন করছি।

আমার লেখার শুরুটা হয় ডায়েরী লেখা দিয়ে। স্কুলে পড়বার সময় ছোটদের পাতায় লিখেছি ছদ্মনামে। বড় হয়েও লিখেছি। যখন কলেজে পড়ি চিঠি লিখতাম, আমার দুই বন্ধুর কাছে। খুব ভাল লাগত। একটা সময় ভেবেছিলাম, মানুষ মনে হয় চিঠি লেখা ভুলে গেছে। ভুল ভাঙ্গে যখন প্রথম আলোর ছুটির দিনের একটা কুইজ জেতার পর বাসায় চিঠি আসতে থাকে। অনেক অনেক চিঠি, প্রতিটা আলাদা এবং বিষয় বস্তুতেও একটু পার্থক্য থাকে। পড়েছি আর হেসেছি। উত্তর দেইনি কাউকে আবার কাউকে উত্তর দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। আর আজ আমি লেখার বিষয় খুঁজে পাচ্ছি না।

কি নিয়ে লিখি? কাউকে সামান্য জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে থেমে যাওয়ার কথা? নাকি নিজের না পাওয়ার-পাওয়ার ব্যর্থতার কথা? কিন্তু লিখব এটা যেন আমি জানি। সেদিন একবন্ধু যাকে কিনা আমি রীতিমত আমার লেখা গুলোর লিঙ্ক দিয়ে দিয়ে পড়াই। আজকাল উনিও প্রায়ই জিজ্ঞেস করেন কি লিখলে নতুন? আমিও লিখলে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে লিঙ্ক টা দিয়ে অপেক্ষা করি বন্ধুটির মন্তব্যের আশায়। একদিন একেক রকমের কথা, কখনো সমালোচনা, কখনো প্রশংসা। একদিন হঠাৎ করেই বললেন, বন্ধু তোমার মনে আছে তুমি লিখেছিলে কয়েকটা টুকরো লেখা “নামহীন তুমি”, “আবারো তুমি”….তোমার ওরকম লেখা গুলো আমার খুব ভাল লাগে। এখন কেন লিখ না ওরকম লেখা? আমি অবাক হই আর বলি, আপনার ওই লেখা গুলো সত্যি ভাল লেগেছিল? ও গুলু ছিল আমার writers block থেকে বের হয়ে আসার ঠিক ঠিক পরের লেখা। আমার নিজেরই ওই লেখা গুলো ভাল লাগে না মনে হয় এডিট করি।আমার মা লেখা গুলু দেখে বলেছেন, আরো একবার দেখো লেখা গুলো। এডিট করা দরকার। কিছু এডিট করতে গিয়েই আবার পড়লাম ঝামেলায়, একজন বলে, কেন করলে তো আর একজন বলে আরো একটু কাটাকাটি দরকার। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে আমি বলি, দূর ছাই লিখব না আবার ওগুলো। যেমন আছে তেমনই থাক।

বাহ, নিজের কাজে আমি আজ নিজেই অবাক। কি মজা অনেক খানি লিখে ফেললাম। কিন্তু কি দেই শিরোনাম? প্রথম আলো অফিসে যেদিন গেলাম, মাহাবুব ভাই বলেন লিখেন না কেন? আমি বলি লিখিতো। আর আজকে লেখার কোন বিষয় পাচ্ছি না, অথচ কিছুদিন আগেও ভেবে রেখেছিলাম কি নিয়ে লিখব। কি অদ্ভুত আমরা! কি অদ্ভুত আমাদের মন! কখন যে কি চায় কিছুই বোঝা যায় না। সত্যি মানুষের মন বোঝা বড় দায়!

একটি অব্যক্ত ভালবাসা এবং আমি...............

---ইশ কতদিন তোমায় দেখিনা বলতো? তোমার গায়ের গন্ধ শুকি না?
---দূর পাগল!
---সত্যি, তোমার গায়ে একটা অদ্ভুত গন্ধ আছে, আমি নাক দিলেই পাই। মিষ্টি একটা গন্ধ। আমি গায়ে নাক শুকি আর বলি। আর সে হাসে। ভারি মিষ্টি সে হাসি। ঘরে ফিরে যখন তার মুখের এই হাসিটা দেখি অনেকদিন না দেখতে পাওয়ার কষ্ট গুলো যেন নিমিষেই বিদায় নেয়।
---তুমি কিন্তু এখন বাইরের কাপড় ছাড়নি। একটু রাগি কন্ঠে আমাকে হুঁশিয়ারি জানায়।
---এই রে! ভুলেই গিয়েছিলাম। ভীষন আলসেমি লাগছে। একটু পরে ছাড়ি?
---দেরী করলেই দেরী হবে। তুমি কি এখন ছোট্টটি আছ? আচ্ছা ঠিক আছে এসো আমি হেল্প করি।
আমি লজ্জায় সরে আসি। বলি, দূর কি যে বল না? আমি বুঝি পারি না? আচ্ছা যাই। কিন্তু ভীষন ক্ষিদে পেয়েছে আর অনেক কথা বলার বাকি, পেটে কথা আর ক্ষিধা দুটোই ভীষন কষ্ট দিচ্ছে।
---এত কথা না বলে আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।

ফ্রেশ হয়ে আসতে আসতে আমার খাবার রেডি।
--- খাইয়ে দাও।
---বাচ্চা আছো এখনো?
--- আচ্ছা খাইয়ে দিতেই তো বললাম। এতে ছোট বড়র কি আছে? যাও দিতে হবে না।
----এখন খাও, হাতে অনেক কাজ পরে আছে। রাতে খাইয়ে দেব।
খাওয়া শেষে পায়ে পায়ে ঘুরতে শুরু করা। এতদিন কি হয়েছে, নতুন বন্ধু কারা, পড়াশুনার খবর, মজা করার খবর, কে কি বলল, ইথারের সম্পর্ক, লেখালেখির খবর বলার শুরু। অনেক রাত হয়ে গেলেও কথা আমার শেষ হয় না। পাশে শুয়েও গল্প করতে করতে ঘুমানো চাই। এমন অনেক বার হয়েছে, আমি গল্প করছি আর একটু পরে শুনি ওর দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলার শব্দ।

ছুটি শেষে ফেরার সময় আমি বলি, এই তোমার ঠিকানাটা দাওতো, তোমাকে চিঠি লিখব।
--সময় পাবে চিঠি লেখার?
---সময় খুঁজে বের করব। আগে তো তুমি অনেক চিঠি পেতে, এখন না হয় আমার কাছ থেকেই পেলে।
----ঠিক আছে লিখ। কিন্তু তোমার সাথে তো প্রতিদিন আমার ফোন এ কথা হয়।
---তাতে কি হয়েছে? তাই বলে কি চিঠি লেখা যাবে না? আর তাছাড়া কিছু কথা মুখে বলা যায় না। সেক্ষেত্রে চিঠির মাধ্যমে বলাটা অনেক সহজ।
“উফফ, তোমাদের এত কথা কেন বলতো, এখন আবার চিঠি দিতে হবে? বাসায় আসলে মুখে খই ফোটে তারপরেও কথা শেষ হয়না এখন আবার চিঠি! তোমাদের নিয়ে আর পারা গেল না।” পাশ থেকে বাবার কথা শুনে মুখে আমাদের দু’জনেরি হাসি। বাবার গলা জড়িয়ে ধরে আমি বলি, আচ্ছা বাবা তুমি কি খুব জেলাস ফিল কর?” “নারে করি না। তোমরা দু’জন দু’জনকে এত ভালবাস কিন্তু পরে আবার ভুলে যাবে নাতো?” দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বাবার বুক থেকে। আমরা দু’জন হঠাৎ করেই চুপ হয়ে যাই।
আমার জন্মের সাথেই এই ভালবাসার সম্পর্কটার শুরু, আমার মা-বাবার সাথে। এখন যখন একা থাকি তখন খুব ভাবি এদের কথা। শনিবার, বিশ্ব ভালবাসা দিবস। আচ্ছা, ভালবাসা দিবস কি শুধু জুগলদের জন্যে? এই ভালবাসার কি কোন স্থান সেখানে নেই? বাবা-মা কে কখন বলা হয়নি তাদের কে যে কতটা ভালবাসি, কারন মনে হয় এটা একটা অনুভুতির ব্যাপার, যেটা অনুভব করতে হয়। ভালবাসা দিবসের লেখা আহবান করা হয়েছে। আর এটা হচ্ছে এই পর্যন্ত আমার রিয়েল লাইফ ভালবাসা।

অনন্ত জীবন যদি: জীবনানন্দ দাশ

অনন্ত জীবন যদি
জীবনানন্দ দাশ
~~~~~~~~~~~~~~~

অনন্ত জীবন যদি পাই আমি - তাহ'লে অনন্তকাল একা
পৃথিবীর পথে আমি ফিরি যদি দেখিব সবুজ ঘাস
ফুটে উঠে - দেখিব হলুদ ঘাস ঝরে যায় - দেখিব আকাশ
শাদা হয়ে উঠে ভোরে - ছেঁড়া মুনিয়ার মত রাঙা রক্ত - রেখা
লেগে থাকে বুকে তার সন্ধ্যায় - বারবার নক্ষত্রের দেখা
পাব আমি; দেখিব অচেনা নারী আলগা খোঁপার ফাঁস
খুলে ফেলে চলে যায় - মুখে তার নাই আহা গোধূলির নরম আভাস।

অনন্ত জীবন যদি পাই আমি - তাহ'লে অসীমকাল একা
পৃথিবীর পথে যদি ফিরি আমি - ট্রাম বাস ধুলো
দেখিব অনেক আমি - দেখিব অনেকগুলো
বস্তি, হাট - এঁদো গলি, ভাঙ্গা কলকী হাড়ী
মারামারি, গালাগালি, ট্যারা চোখ, পচা চিংড়ি - কত কি দেখিব নাহি লেখা
তবুও তোমার সাথে অনন্তকালেও আর হবে নাকো' দেখা।

February 07, 2009

শুধুই কি কথোপকথন??:: ৬ (শেষ পর্ব)

পরদিন রুদ্রর সাথে আবার কথা হল অনুর। বরাবরের মত কুশল জিজ্ঞাসা করে কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই কথা শুরু হল।
--গতকালের কথা শেষ করেন।
--হুম্ম, আমি একজনকে খুব ভালবাসি। আমার অফিস কলিগ অপর্না। আমরা একসাথেই পড়াশুনা করেছি। সে আমার সিনিয়র। অর একটা বোন তোমাদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, ডাক নাম জয়িতা।
--তিনি কি জানেন আপনার ভাল লাগার কথা?
--না বলা হয়নি। যদি আমাকে ছোটভাইয়ের মত দেখে সে ভয়ে।
--তাহলে এখন কি করবেন? বলবেন না? বলে ফেলেন। আমার মত দেরি করে ফেললে আর হয়ত কখন বলাই হবে না।
--না বলব না। তুমি কাকে বলতে পারনি?
ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল দু’জনেই। কথা এড়িয়ে অনু বলল-
--এটা কোন কথা হল? আপনি কাউকে ভালবাসবেন অথচ জানাবেন না। at least, জানালে পরে হ্যাঁ না কিছু একটা তো জানতে পারবেন। বলেই দেখেন।
--না বলব না। কোনদিন বলব না।
--আজব! কেন বলবেন না?
--জানি না।
--আচ্ছা আমি আপনাকে কয়েকটা প্রশ্ন করি?(পরিবেশ হাল্কা করার চেষ্টা)
--কর।
-- কালো না সাদা?
--কালো।
--অপর্না নাকি অন্যকেউ?
--অন্যকেউ।
--কেন?
--অপর্নাকে আমি পাব না। ওর একটা সম্পর্ক আছে।
--ও। কিন্তু আমার মনে হয় এটা ঠিক হচ্ছে না। আপনার বলা উচিত ওনাকে।
--হবে না কিছুই হবে না।
--আমি আপনাকে গতকাল একটা কথা বলেছিলাম মনে আছে কিনা জানি না। আপনার সাথে আমি আর কথা বলব না। আমি আজ থেকে চলে যাচ্ছি।
--তুমি কি আমার জন্যেই চলে যাচ্ছ?
--না আপনার জন্যে আমি কেন যাব? আমার মনে হচ্চে চলে যাওয়া উচিত।
--যাবার আগে তোমায় একটা অনুরোধ করতে পারি? নেক্সট সপ্তাহে আমার-----------
--কি? আপনার বার্থডে?
--নাহ তবে প্রথম “B” এর সাথে মিল আছে।
--বিয়ে? (এবার অনুর আকাশ থেকে পড়ার মত অবস্থা, এতটা আসা করেনি সে)
--হুম্ম বিয়ে। যাকে বিয়ে করছি তার নাম অনিন্দিতা। তুমি আসলে ভীষন খুশি হব। আচ্ছা তোমার না গেলে হয় না?
--ইশ এত্ত বড় একটা ভাল খবর আগে দেবেন না? ভাল খবর কেউ কি শেষে দেয়? আমি চেষ্টা করব কিন্তু কথা দিচ্ছি না। আমাকে যেতেই হবে। অনেক হল আমি এবার যাই।
--ইয়ে মানে তোমার ফোন নাম্বারটা কি পেতে পারি?
--নিশ্চয়ই। ০১৭............। আপনারটা প্লিজ?
--০১৭........., ভাল থেকো। খুব মিস করব তোমার মত ভাল বন্ধুকে।বিদায়।
--আপনি ও ভাল থাকবেন। বিদায়।
এখানেই এখন পর্যন্ত কথোপকথনের শেষ। অনু আর রুদ্র এখন পর্যন্ত জানে না আর কি কখনো তাদের কথা হবে কিনা।

## দুঃখিত। পোষ্টটা আবারো বড় হয়ে গেল। হয়ত শেষ হল এই কথোপকথন। পরে যদি তাদের আবার কথা হয় আপনাদের আবার জানিয়ে দেব। আপাতত এখানেই শেষ।

শুধুই কি কথোপকথন??:: ৫

--কেমন আছ?
--ভাল।
--আপনি?
--এইতো!
--আপনি কি জানেন, আজকে আমি আপনাকেই খুঁজছিলাম?
--আমাকে?? :O কি সৌভাগ্য বলতো আমার!
-- :) জানি না কেন, কিন্তু আজকে মনে মনে আপনাকেই খুঁজছিলাম।
--দিন কাল কেমন যাচ্ছে তোমার?
--ভালই তো।
তারপর অন্যান্যদিনের মতোই অনেকক্ষন চুপচাপ দুজনেই।
--কি ব্যাপার কথা বলছেন না যে? অনুই কথা শুরু করল কথা।
--তুমি বল...
--আমি কথা বললে কিছু পাব?
-- কি পেতে চাও?
--আপনি কি দিতে পারবেন?
--আমার যা সামর্থ তাই দেব।
--তাই?
--হুম্ম তাই।
--কফি খাবেন? আমি এখন কফি খাব।
--দিতে পারো।
--পার্থিব নাকি অপার্থিব?
-- আপাতত অপার্থিব।
-- :) ঠিক আছে। নিন তাহলে।
--ধন্যবাদ।
--কেমন হলো?
--খুব ভাল, দেখতে হবে না কে বানিয়েছে!
-- :D। payment নিয়ে কথা হচ্ছিল। বললেন না তো কি দেবেন।
--তুমি যা চাও তাই দেব।
--পার্থিব নাকি অপার্থিব?
--তুমি কি চাও?
--(অনেকক্ষন চুপ থাকার পর প্রসঙ্গ পালটে) আপনি কি একটা জিনিস জানেন?
--কি?
--আপনার অস্তিত্ব নিয়ে আমার সংশয় আছে।
--:O কেন?
--মনে হয় আপনি একটা অপার্থিব জিনিস। মাঝে মাঝে তো মনে হয় আমি কোন একটা মেশিনের সাথে কথা বলছি। কে জানে হতেও পারেন সেটা।
--আমি এম্নিতেই কম কথা বলি সেটাতো তুমি জান। তারপরেও এই প্রশ্ন কেন?
--মনে হল তাই বললাম। আপনি গান শুনেন?
--এটা একটা প্রশ্ন হল? Music ছাড়া বাঁচা যায়? তবে হিন্দি গান শুনা হয় না খুব একটা।
--হুম্ম। আপনার সম্পর্কে কিছুই জানা হল না।
--কি জানতে চাও। (একটু সতর্ক হয় রুদ্র)
-- এই যে আপনার ফ্যামিলি, কোথায় থাকেন এইসব।
--কি হবে এগুলো জেনে?
--কেন বন্ধু কি বন্ধুর খবর জানতে পারে না?
--হুম্ম। আমার বাবা-মা কিছুই করেন না। আমরা দুই ভাই। আমি ছোট।
---এই?? মানে এখানেই শেষ?
--হুম্ম। আর কিছুই জানানোর নেই। তুমি কিন্তু বললে না এতদিন কোথায় ছিলে?
--ক্লাস আর পরীক্ষা শেষে একটু বেড়াতে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে সিলেটে।
--খুব মজা করলে তাই না? আমাকে একবারের জন্যেও মনে পড়ে নাই?
-- না পরে নাই। কেন মনে পরার কথা ছিল নাকি?
--না এম্নিতেই বলছিলাম।
--আমি ভাবছি আপনার সাথে আর কথা বলব না।
--কেন?
--অই যে বললাম আপনার অস্তিত্ব নিয়ে আমি সন্ধিহান।
--তোমার সাথে যে আমার একটা কথা ছিল!
--বলেন বলে ফেলেন।
--আমি একজনকে খুব ভালবাসি কিন্তু বলতে পারছি না।
--কেন? সমস্যা কোথায়? ভাল লাগলে বলে দেয়াটাই তো ভাল আর সেটা আপনাকেই করতে হবে। (এমন সময় একটা জরুরী ফোন এল, কথা বলতে বলতে অনু বিদায় নেবার প্রস্তুতি শুরু করল)
--যাকে আমি ভালবাসি সে আমার চেয়ে বড়। আমার কলিগ!
--আজ একটু তারা আছে আমার। আজকে যাই।পরে আবার কথা হবে।
--ঠিক আছে। ভাল থেকো।
--আপনিও।

February 06, 2009

শুধুই কি কথোপকথন??:: ৪

---কেমন আছো?
---ভাল।
----কোথায় ছিলে এতদিন?
---একটু ব্যস্ত ছিলাম।
----খুব মিস করেছি তোমাকে…………
----ও।
----তুমি মিস করোনি?
----নাহ। মিস করার সময় কোথায়?
এরপর অনেকটা সময় কেউ কোনো কথা বলল না। কতটা সময় হবে? ২ মিনিট? না ১৫ মিনিট? এসময় কথা শুরু হল আবারো।
----কি ব্যাপার চুপ করে আছো যে?
----এমনিতেই
---কিছু বল.........
----কি বলব?
----তোমার কথা...
---আমার তো কোনো কথা নেই...
----কেউ তোমাকে খুঁজে পেলো?
----নাহ।( বিরক্তির প্রকাশ অনুর কন্ঠে)
----পড়াশুনার বাইরে আর কি কি কর তুমি?
----তেমন কিছু না, ছবি আঁকি, বই পড়ি। আপনি? (কিছুটা সপ্রতিভ)
----এইত মুভি দেখা, নেটে বসা সময় চলে যায়।
---একটা প্রশ্ন করি?
----হুম্ম করো।
---নাহ থাক আজকে না অন্য কোন দিন।
---আজকের কাজ কালকের জন্যে ফেলে রাখতে নেই।
---হুম্ম।
----মানে?
----নাহ পরেই করি। আপনার প্রিয় রঙ কি?
----লাল। তোমার?
----সাদা। প্রিয় ফুল?
---কৃষ্ণচূড়া। তোমার?
---রজনীগন্ধা।
---পড়াশুনা করতে কেমন লাগছে?
---ভাল। কেন?
----এমনিতেই।
---আচ্ছা আজ আসি পরে কথা হবে।

বলেই দেরী করলো না অনু, চলে গেল। ২৫ দিন পরে অনু আর রুদ্রর কথা হল আজ। অনেকদিন পরে কথা কিন্তু সেই প্রথমদিনের উত্তাপ কি আজ কোথাও হারিয়ে গেল? কোথায় ছিল অনু এতদিন? কিছু বলল না নাকি বলতে চাইল না??
(চলবে)

February 02, 2009

শুধুই কি কথোপকথন??:: ৩

** রুদ্রর হঠাৎ করেই মেয়েটাকে ভাল লেগে যায়। কোথায় যেন কি একটা আছে! প্রথমত মেয়েটার কথা বলার স্টাইল, আর দ্বিতীয়ত নিজেকে সামলে রেখে চটপট কথা বলে যাওয়া। কথা শেষ হতেই রুদ্রর চোখে-মুখে হাসি আর আশ্চর্য হবার মিশ্র অভিব্যক্তি। অফিস শেষ করার অনেকক্ষন পর্যন্ত মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল না। কি অদ্ভুত! মাত্র কয়েক লাইন কথা কিন্তু তার এতটা প্রভাব? রুদ্রর চেহারার এই আভা বন্ধু পলাশেরও নজর এড়ালো না। সেই প্রথম যখন বুয়েটে ভর্তি হয় তখন প্রথম এই আভাটা দেখেছিল রুদ্রর মুখে যেন চির আকাংখিত জিনিস পেয়ে গেছে। আজ আবার অনেক দিনপর, কি হল ছেলেটার?
বারান্দায় দাড়িঁয়ে আকাশটা দেখছিল রুদ্র। অনেক তারা আজ, ওরাও মনে হয় আজ উৎসব করতে এসেছে ওর সাথে। চোখে পড়া চশমাটা খুলে ঝাপসা হয়ে যাওয়া আকাশটাও আজ উজ্জ্বল লাগছিল তার। পলাশ যে তার পাশে এসে দাড়িয়েছে সেটা তার চোখেই পড়েনি। এখন সে খেলবে আর দেখবে মনে মনে ছক কষল সে।
--- কিরে কি হয়েছে?
---তুই কখন এলি?
---অনেক ক্ষন! তুই তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসছিলি।
---(চশমা মুছে, পড়ে নিয়ে) হুম্ম।
---নতুন কিছু হয়েছে নাকি রে?
---হয়েছে। বলেই হাসল। তারপর আবার বলল, কিন্তু কয়েকদিন দেখি তারপর তোকে জানাব।
---কি দেখবি? বলে দিয়েছিস নাকি ওনাকে?
ভুবন ভোলানো হাসি হেসে ঘরে ঢুকে বিছানায় বসল।
--- (কথা এড়িয়ে) এখনো কিছু বুঝতে পারছি না। তবে যদি কিছু হয়ে যায় তুই সবার আগে জানবি। সো আপাতত নো টেনশন। যা গিয়ে ঘুমা অনেক রাত হল। আমিও ঘুমাব। কাল আবার অফিসে যেতে হবে। বেরিয়ে এল দীর্ঘশ্বাস।
--বলিস কিন্তু। গেলাম আমি। :) বলেই পলাশ চলে গেল।

পরেরদিন অফিসে গেল মনে আনন্দ নিয়ে। নানান কাজের চাপে ভুলেই গিয়েছিল মেয়েটার কথা। রোজকার কাজ গুলো ঠিকঠাক মতো করে গেল। দুপুরের খাবার খেল তারপর বোর্ড মিটিং। সন্ধ্যায় একটু ফাঁক পেতেই একটা নাম মাথায় খেলতে লাগল অনুসূয়া। দারুন নামটা! এসময় সামনে দিয়ে চলে গেল অপর্না। ওর অফিস কলিগ। তার চলে যাওয়াটা দেখছিল সে। এক সময় ভুলে গেল অনুসূয়া নামটা। আজ আর কথাও বলা হল না। বাসায় ফিরেও তেমন কোনো কথা না শুধু রুটিন কাজ। পরের দিন খুঁজল সেই সুন্দর নামের মানুষটাকে। কিন্তু খুঁজে পেল না।

একটা একটা করে দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু অনুসূয়ার কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। কোথায় গেল মেয়েটা? রেগে গেল? কে জানে কি হয়েছে? কাজের প্রচন্ড চাপে আস্তে আস্তে হয়ত বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু মাঝে মাঝে উঁকি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এসে বলে গেল, ভুলে গেলেন? একটা, দুইটা করে পনেরটা দিন কেটে গেল......কোথায় গেল মেয়েটা?

January 31, 2009

শুধুই কি কথোপকথন??:: ২

সেদিন কথা শেষ করে আপন মনে অনেকক্ষন হেসেছিল অনু। কি আজব ব্যাপার! মানুষগুলো আজকাল কি হচ্ছে?? কথা বলতে আসলেই প্রথমে জিজ্ঞেস করে, boyfriend আছে? এটা কোন প্রশ্ন হল? খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল আজ তার। ঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে হালকা বাতাস ঢুকছে, আকাশটা ভীষন রকম লাল, কাকগুলো ডাকতে শুরু করেছে। ছাদে পা দেবার সাথে সাথেই একটা পশলা বাতাস মনটাকে হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গেল। সকালের এই সময়টা খুব প্রিয় অনুর।

বেলা বাড়ল এক সময়। ক্লাস শেষে অন্যসব দিনের মত সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। এই সপ্তাহের শেষে বেড়াতে যাবে সবাই। প্লান হচ্ছে।
--কিরে কই যাবি কিছু বল?
---দূর! পকেট খালি এইবার। ফয়সালের প্রশ্নে সুমিতের উত্তর।
---চল পুরান ঢাকাতে যাওয়া যাক এবার, কাছেই তো। অনুর প্রস্তাব
---এটাতো কাছেই, আর আমরা সবাই মিলে না হয় তোকে স্পন্সর করবো, পরে না হয় একদিন খাওয়াবি, তাহলেই তো হলো।
আতিকের কথা বলা শেষ হতেই ফয়সালের মুখের দিকে তাকিয়ে খুব হেসে দিল সবাই। আর সেটা দেখে সুমিত সহ বাকী সবাই। খুব মজা হয়েছে আজকের ল্যাবে। পর পর দুইটা ঘটনা!

সবাই সার্কিট ঠিক করার কাজে ব্যস্ত, কিন্তু অনু, ফয়সাল, সুমিত আর নুপুরদের সিগনাল আসছে না, এর মধ্যে দুই বার সুমিত আর ফয়সালের ঝগড়া হয়ে গেছে। স্যারের সাথে কথা বলে টুলে বসতে গিয়ে ফয়সাল দুম করে পরে গেলো। :)
একপাশ থেকে সুমিত আর একপাশ থেকে নুপুর ধরে ফেলায় ফয়সালের পুরোটা পরা হল না। ক্লাস এ স্যার শুদ্ধ সবাই হাসতে হাসতে ভিরমি খাবার দশা! সবচেয়ে বেশি হেসেছে মনে হয় অনু কারন কাজটা তারই করা ছিল।ফয়সাল রইল প্রতিশোধের অপেক্ষায়। অবশ্য অপেক্ষা বেশীক্ষন করতে হয়নি। অনু IC লাগাচ্ছে আর তার পিছনে ফয়সাল।

---দেখতো ঠিক আছে কিনা, সুমিতের দিকে তাকাল অনু আর নুপুর।
---আগে দেখ আউটপুট কেমন আসে? পিছন থেকে ফয়সাল।
---আসবে আসবে, ঠিক আসবে। আরে এখানে তো pulse নাই।
--- সমস্যা নাই, পেন্সিল দিয়ে দেয়া যাবে। অনুর উত্তর।
-- কিভাবে?
--- কিভাবে মানে? তুই জীবনেও পেন্সিল দিয়ে pulse দিস নাই মনে হয়। বলেই পিছনে ফিরল অনু আর দেখল স্যার হাসছেন আর ওর দিকে তাকিয়ে আছেন।
চমকে এমনি অপ্রস্তুত অবস্থা অনুর যে বুঝতে আর কিছুই বাকি রইল না। আরেকদফা হাসি শেষ হল।
আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে গতকাল রাতের কথা গুলো ঘুরে ফিরে মাথায় এল। মনে মনে নিজেকেই শোধরাল, মেয়ে পটানোর নতুন আইডিয়া!! মন্দ নয়,বলেই আপন মনে হেসে ফেলল অনু। তবে একটা কথায় আটকে রইল একটা কথায়.........

January 28, 2009

শুধুই কি কথোপকথন??:: ১

--কেমন আছো তুমি?
--হুম্ম, ভাল।
--আপনি?
--ভাল।
--কিসে পড় তুমি?
--তড়িৎ প্রকৌশলে।
--আমিও এই বিষয়েরই ছাত্র।
--ও আচ্ছা। কি করেন আপনি?
---আমি এখন জিপিতে জব করি। কোন ইয়ার চলছে তোমার?
--সেকেন্ড ইয়ার। আপনি কি বুয়েটের ছাত্র?
--হুম্ম। একটা প্রশ্ন করি যদি কিছু মনে না করো?
--হুম্ম।
--তুমি তোমার মনের কথা শোন নাকি মস্তিস্কের কথা শোন?
--মস্তিস্কের কথা শুনি। কেন?
--তোমার নিশ্চয়ই কোনো ছেলেবন্ধু নেই, তাই না?
--( রেগে) নেই তো কি হয়েছে?
--নাহ কিছু হয়নি, আমারো না কোনো মেয়ে বন্ধু নেই। কি করি বলত?
--আমি কি জানি কি করবেন......
--তুমি রেগে যাচ্ছ।
--(নিজেকে সামলিয়ে) নাতো!
--শোন, মনের ভিতরটাকে আলোকিত কর। মনের কথা বুঝার চেষ্টা কর।
--ঠিক আছে কিন্তু আপনি আমাকে এসব কথা কেন বলছেন?
--আচ্ছা তোমায় কেউ কখন বলেনি ভালবাসি?
--সেটা আমি আপনাকে কেন বলব?
--খুজঁছ নাকি কাউকে?
--নাহ আমি কেন খুঁজব?? আজব!!
--আমিও না কাউকে খুঁজি না, কেউ চাইলে খুঁজে নেবে কি বল?
--
--তুমি কথা বল। smiley দিবা না আমি পছন্দ করি না।
--ওহ, sorry!
--হুম্ম তাইত উচিত।
--খুঁজ না কিন্তু ঠিক আছে?
--দেখা যাক।
--আজ যাই। পরে দেখা হবে আবার।
--ঠিক আছে।

এখানেই সেদিনের মতো কথা শেষ।

January 27, 2009

ছুটির কড়চা!

অনেকদিন ব্লগে অনুপস্থিতির জন্যে অনেক কিছু মিস করেছি। প্রথমে গত ঈদ এ গল্প লেখা, নির্বাচনের আমেজ, আর নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা, মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্য, ব্লগারস মিট আপ সহ আরও কত কি! যাই হোক এক মাসের ছুটিকে বিদায় দিয়ে এখন আবার পুরানো ব্যস্ত সময়ে ফিরে আসা। আমি কি করেছি এত দিন? অনেক কিছু আবার কিছুই না।

বাসায় গিয়ে দেখি এবারো যথারীতি আমার কিছু বই গায়েব হয়ে গেছে। কোথায় গেল প্রশ্ন করতেই মা র উত্তর আমার এক দাদা এসে নিয়ে গেছেন। নাম শুনেই বুঝলাম বই ফেরত পাবার আশা খুবই কম যদি না আমি কিছু বলি। মনে মনে ফন্দি আটঁতে লাগলাম যক্ষের ধন ফেরত পাবার জন্যে। নতুন গল্পের বই পড়া শুরু করলাম। সাথে কিচু লেখা-লেখির বৃথা চেষ্টা। টুকটাক যাই লিখি পরে দেখা যায় নিজের পছন্দ হচ্ছে না। এডিট করা, কখনো আবার লেখা। গল্পের একটা প্লট মাথায় ঘুরছিল অনেকদিন ধরেই। একদিন রাতের বেলা খাবার সময় মাকে বললাম। গল্পটা শোনালাম। মানে ওই layout টা। শোনানোর বলল, প্লটটা ভাল কিন্তু ঠিকঠাক মত লিখতে হবে। উৎসাহ বেড়ে গেল। কিন্তু ওখান পর্যন্তই।

অনেকদিন পরে বাসায় তাই একদিন এর সঙ্গে নয় ওর সঙ্গে দেখা কর। সবচেয়ে মজা লেগেছিল মামার বাসায় গিয়ে। প্রজ্ঞা আর পৃথা আমার দুই মামাত বোন। ওদের আবার আমার সাথে খুব খাতির। কি করেছে না করেছে সব বলা চাই, আর আমি কি করছি তার ও খবর নেয়া চাই। প্রজ্ঞা স্কুলে ভর্তি হল এবার। কি দেয়া যায় তাই নিয়ে মা আর আমার বিস্তর গবেষনা করতে হল। মা কিছু বলছে আমার পছন্দ হচ্ছে না। আবার আমি কিছু বলছি মার পছন্দ হচ্ছে না মাঝখানে হয়ত বাবা কিচু বলল আর আমাদের দুজনের সেটা পছন্দ না হওয়ায় বাবাকে কড়া করে ধমক। তারপর প্রজ্ঞার জন্যে একটা ঘড়ি কেনা হল। আর সেটা পেয়ে আমার ছোট্ট বোনটা বেজায় খুশি। মামার বাড়িতে গেলাম অনেক দিন পর মনে হয় বছর খানেক পর।

আরো একটা মজার ব্যপার ছিল। আমি এবার নতুন ভোটার। নির্বাচনের দিন সকালে ঘুম ভাংগল মুঠোফোনের বার্তায়। তাতে লেখা “Happy Election Day”. ভোট দিতে গিয়ে দেখলাম মানুষ যেন ঈদ করছে। দুপুরে গেলাম ভোট দিতে ভাবছিলাম হয়ত ফাঁকা থাকবে কিন্তু গিয়ে দেখি মানুষের হাঁট। খুব মজা লাগল!

অনেক দিন পর আমার স্যারদের দেখা করলাম। এক কথায় যেন আবার ফিরে যাওয়া। স্যারদের সাথে দেখা হওয়ার পর কয়েকজন এলেন বাসায়। প্রিয় শিক্ষকদের অনেকদিন পর দেখে মজা লাগছিল খুব। আমার আবার স্যার দের ব্যাপারে খুব খুঁতখঁতে স্বভাব সবসময়। স্যার পছন্দ না হলে আমি স্যার এর কাছে পড়ব না। মা-বাবা আমার এই অভ্যাসটা নিয়ে খুবই বিরক্ত। কোন স্যার যদি আমাকে পড়াতে আসেন তো আমি আগে স্যার এর চেহারা দেখব, স্যার কে দেখে যদি মনে হয় ইনি স্যার এর মত দেখতে তাহলেই আমি পড়ব। আমার কথা হল একজন শিক্ষক কে দেখে যদি আমার শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে না হল তাহলে আমি পড়ব কি করে? HSC তে পড়বার সময় রসায়ন নামক বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই ভয়ে ছিলাম। তো মা আমার জন্যে একজন কে বললেন পরীক্ষার আগে একমাস আমাকে জেন একটু দেখিয়ে দেন। স্যার কে দেখে আমার পছন্দ হল না। ব্যস, মাকে বললাম আমি পড়বনা। এটা কোন স্যার হল? মাতো রেগেমেগে সেরকম অবস্থা। মনে আছে স্যার যেদিন শেষ পড়ালেন সেদিন আমাকে বললেন, আচ্ছা তুমি আমাকে teacher হিসেবে মানতে পারছ না কেন? আমি উত্তরে বলেছিলাম, স্যার সেরকম কিছু না। তবে আমার স্যারদের দেখলে শ্রদ্ধা করতে ইচ্চে করবে, জানতে ইচ্ছে করবে, পড়তে ইচ্ছে করবে কেন যেন আপনার কাছে পড়তে বসলে আমি সেরকম কিছু খুজে পাইনা। কিন্তু আপনি ভাল পড়ান, আপনি যা পড়িয়েছেন অনেক ভাল পড়িয়েছেন। স্যার অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে, তারপর বললেন, তোমাকে পড়াতে পারলে ভাল লাগত কারন তুমি জানতে চাও। যাবার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন আমার পড়াশুনার দিকে মা যেন খেয়াল রাখেন।

এই যে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি কিন্তু আমার এই স্বভাব যায়নি। কোন স্যারকে ভাল না লাগলে আগের মত না হলেও আমি বন্ধুদের কাছে বলে ফেলি। তবে এই স্বভাবের জন্যে কিন্তু কখন ঠকিনি এখন পর্যন্ত, বরং লাভ হয়েছে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যত শিক্ষকের কাছে পড়েছি তাদের good book এ নাম লিখিয়েছি। মাঝে মাঝে আমার সহপাঠীরা খুব অবাক হয় যখন দেখে কয়েক সেমিস্টার আগে ক্লাস করা স্যাররা আমাকে দেখে কেমন আছো জিজ্ঞেস করেন, নাম জানেন। আমার ডাক্তারী পড়ুয়া বন্ধু রুবী বলে, আমাদের চেহারা মনে হয় এমন তাই এত খারাপ অবস্থা! ঠিক যেন নজরুলের গান, “আমারে দেব না ভুলিতে”।

ছুটি শেষ, আবার ব্যস্ত দিনের শুরু। দেখতে দেখতে একটা সপ্তাহ কেটে গেল। আরো একটা নতুন বছর, নতুন প্রত্যাশা। দিন বদলের অপেক্ষায় আমরা সবাই।