(২)
হাল্কা নীল রঙের আলো ঘরটাকে কেমন যেন অদ্ভুত করে রেখেছে। নীলাভ কিন্তু কেমন যেন স্বর্গীয় একটা ভাব আছে। ঘরে জিনিস বলতে একটা খাট, একটা টেবিল আর একটা মানুষের থাকবার জন্যে যা প্রয়োজন তাই।
টেবিল ল্যাম্পটা জ্বলছে, ল্যাপটপটাও খোলা। ফ্যানের বাতাসে কাগজ গুলো উড়ে যাবার চেষ্টায় রত। কিন্তু টেবিলের সামনে যে চেয়ারটা, সেটা খালি পরে আছে। কেউ যেন একটু আগেই বসেছিল ওখানে। ঘরের সাথে লাগোয়া বারান্দার পর্দা বাতাসে উড়ছে, হয়ত বৃষ্টি আসবে। রাত যখন খুব গভীর হয় তখন এই বাতাস যেন মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়!
আবছা অন্ধকারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেকে দেখে বিজনের খুব কষ্ট হলো। হাল্কা পায়ে হেঁটে সুমনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো বিজন।
বাবার এই আসার জন্যে সুমন যেন প্রস্তুত ছিল, ঠিক তেমন দাঁড়িয়ে ছিল তেমনি রইল সে। দুজনকেই যেন রাতের নিস্তব্ধতা ঘিরে রাখলো কিছুক্ষন। সেটাকে ভাংগলো বিজন।
- কেমন আছিস খোকা?
- ভাল আছি বাবা। তুমি কেমন আছ?
- যেমন দেখছিস ঠিক তেমন আছি। বলেই রেলিং এ থাকা ছেলের হাতের উপরে হাত রাখে বিজন। আচ্ছা তোর জয়েনিং কবে? কিছু খবর পেয়েছিস?
- এই তো আগামী মাসেই জয়েন করব। স্যাররা বলেছেন কয়েকদিনের মধ্যেই চিঠি পাঠাবেন। তোমার কেমন চলছে সব?
- হুম্ম ভাল চলছে। অফিসে নতুন কিছু ইঞ্জিনিয়ার জয়েন করেছে। তোর ব্যাচম্যাট আছে একজন। ইল্যাকক্ট্রিকাল থেকে পাশ করেছে বুয়েট থেকে। আমাকে দেখেই প্রথম দিন খুব খুশি। কি যেন ছেলেটার নাম। ও হ্যাঁ মনে পড়েছে রকিব। চিনিস নাকি?
- হুম্ম চিনি। আমাকে ফোন করেছিল।
- তোর ফিউচার প্ল্যান কি? কিছু ঠিক করেছিস?
- বাবা, আমি ভাবছিলাম এম. এস. টা করেই ফেলব কিন্তু আর কয়েকদিন পরে। এখনি নাহ।
- এই কটা’দিন কি করবি তাহলে? কোথাও থেকে ঘুরে আয়।
- ভাবছি, সব বন্ধুরা মিলে বের হব। তাই কাল সবাই এক সাথে হব।
- সেই ভাল। আচ্ছা কিছু হয়েছে তোর?
কিছুক্ষন চুপ থেকে সুমন বলল, বাবা দিন সব সময় কি আর ভাল যায়? তুমি আমার খুব ভাল একজন বন্ধু কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কথা ঠিক মনে থেকে বের হতে চায় না। মনে হয় যত মনে থাকবে ততই ভাল। কিছু কথা থাক না মনের মাঝে। কি এমন ক্ষতি তাতে?
ঠিক আছে সে না হয় মানলাম। কিন্তু বন্ধু বলে কাছে টেনে নিয়ে আবার কেন দূরে সরিয়ে নিচ্ছিস নিজেকে? কোন সমস্যা থাকলে বল। কথা বলতে বলতে দুজনই এসে ঘরে ঢুকল। বিজনকে চেয়ারে বসিয়ে সুমন নিচে ফোমের উপরে বসল।
বাবা কিছু থাকে, থেকে যায়। কিছু কিছু থেকে যাওয়া কি ভাল নয়?সুমন মাথা নিচু করে কথা গুলো বলল।
তাই বলে একটা ছোট্ট ব্যাপায় নিয়ে সারা বাড়ি মাথায় তুলবি? একটা জিনিস আমি তোর সম্পর্কে জানি তুই কখনো ছোট ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাস না। কিন্তু আজ মনে হল কিছু আছে ওই কার্ডে।
বাবা, আমি জানি তুমি খুব চিন্তা করছো কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। হঠাৎ করেই কেন জানি মেজাজ খারাপ হয়ে গেল! বলেই সুমন আবার মাথা নিচু করল আর সে অবস্থাতেই বলল, বাবা I am sorry।
ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল বিজন। ছেলেটা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে আছে, কিছু একটা আছে যা সে বলতে চাচ্ছে না। বিজন ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। সুমনের মাথায় হাত রেখে বলল, কিছু না হলেই ভাল। তুই ও ভাল থাকিস আমরাও ভাল থাকি। তবে কি জানিস চাপা ক্ষোভ আর কষ্ট মানুষকে কষ্ট দেয়। সব কাজের পিছনেই কোন না কোন কারন থাকে। ভাল থাকে, মন্দ থাকে। তবে তোর নিজের কাজে যেন তোর সামনের মানুষটা কষ্ট না পায় সেদিকে একটু খেয়াল রাখিস। অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়। একটানে কথা গুলো বলে বিজন ঘর থেকে বের হয়ে যেতে যেতে পিছনে ফিরে তাকাল।
সুমন তখনো ঠিক তেমন ভাবেই বসে আছে। দেখে বিজনের কেন যেন খুব কষ্ট হল।
সুমন এভাবে কতক্ষন বসে ছিল নিজেও জানে না।
কি করছিলাম আমি? কার কথা ভাবছিলাম? নিজের মনে মনেই কথা বলে সুমন। আমি কি করে পারি চৈতির কথা চিন্তা করতে? আমি কি সেটার যোগ্য? কেনই বা ভাবছি?
বৃষ্টি পড়ছে। গা ঝেড়ে উঠে ঘরের দরজাটা এলিয়ে দিয়ে চেয়ারটায় প্রথমে হেলান দিয়ে বসল, একটু পরে সোজা হয়ে বসল। instrumental মিউজিক আস্তে সাঊন্ড দিয়ে ছেড়ে দিয়ে ল্যাপটপের কী-বোর্ডের দিকে হাতের আঙ্গুল গুলো চলে গেল। Google এর search box এ যেন আচ্ছন্নের মত লিখে ফেলল, Chaity Chowdhury. তারপরে এন্টার কী চেপে দিল।
(চলবে)
June 14, 2009
ফেরা
(১)
-কে রেখেছে এই কাগজটা আমার টেবিলে? কে রেখেছে?
বেশ জোরে চিৎকার করতে করতেই সুমন ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সুমন বাড়ির বড় ছেলে তাই তার সমস্যা মানেই বড় কিছু! চিৎকার শোনার সাথে সাথেই সবাই একরকম দৌড়ে এল।
একে সন্ধ্যার সময় তারউপরে হঠাৎ কি হল ভেবে নীলিমা রান্না ঘর থেকে হম্বিতম্বি করে ছুটে এল। সুমন এসে প্রথমে মায়ের সামনে দাঁড়াল। ক্ষুব্দ গলায় মাকে প্রশ্ন করল,
-মা এই কাগজটা কে আমার টেবিলে রেখেছে বলতে পার? আর রাখলেই আমার টেবিলে কেন? রাখবার কি আর কোন জায়গা ছিল না?
-খোকা, কি হয়েছে? কি আছে ওই কাগজে যে তুই দেখেই অমন চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিস? দে দেখি কি আছে ওটা তে? বলেই নীলিমা সুমনের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিল। একটা ভিজিটিং কার্ড!
কার্ডটা দেখেই মা বলল, তুই একটা আচ্ছা মানুষ খোকা! এই একটা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে বাসা মাথায় তুলতে হয়? আমি রেখেছিলাম কার্ডটা। এবার বল কি হয়েছে?
সুমন এতক্ষন চুপ করে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। শেষ শব্দটা বলার সাথে সাথেই আবার গর্জে উঠল কিন্তু এটা কেন আমার টেবিলে, আমার ঘরে থাকবে? কেন রেখেছো? কি কারনে?? কিসের প্রয়োজন এই কার্ডের?
ছেলেকে এত রাগ করতে আর কখনো দেখেছে কিনা নীলিমা ভাবল। দাদার রাগ দেখে আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকে গেল দুইভাই বোন, কাজের লোকও কাজ করতে চলে গেল। বাসার সবাই কি কারনে সুমনকে খুব ভয় পায়! ছেলেকে একরকম টানতে টানতে মা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসালো। নিজেও বসল সুমনে সোজাসুজি।
তাদের খাবার ঘরটা খুব সাজানো। সবটাই অবশ্য হয়েছে সুমনের বাবার ইচ্ছেতেই। ছিমছাম তবে আলকোজ্জ্বল। খাবার সময়টাতে বেশ আরাম করেই কেউ খেতে পারবে। এক পাশে সম্পুর্ন কাঁচের দেয়াল দিয়ে বসার ঘর থেকে আলাদা করা। হাল্কা অফ হোয়াইট কালারে নীলিমাকে একটু চিন্তিত দেখালেও ক্লান্তিটা ঠিক ধরা যাচ্ছে না। কম্পিঊটার প্রকৌশল থেকে মাত্র ৬ মাস আগে পাস করে বের হওয়া ছেলে যে কিনা কয়েকদিন পরেই বুয়েটের লেকচারার হবে কিছুক্ষন তার মুখের দিকে তাকিয়ে অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করল। তারপরে কার্ডটার দিকে তাকাল। খুব সুন্দর কার্ডটা আর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,Chaity Mazumder, System Engineer.
- এত রাগ করছিস কেন? কি হয়েছে রেখেছি তো? আজকে হঠাৎ অফিস থেকে ফেরার পথে নন্দনে গিয়েছিলাম বাজার করতে তখন দেখা হয়ে গেল। আসার সময় গাড়ীটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখন চৈতী আমাকে বাসায় দিয়ে গেল। তারপরে আমি নিজেই ওর ভিজিটিং কার্ডটা রেখেদিলাম সময় করে একটা ধন্যবাদ- মাকে কথা শেষ করতে দিল না সুমন।
- কেন? গাড়ী থেকে নামার সময় ধন্যবাদ দিয়ে আস নি? তাহলে আবার পরে ঘটা করে ধন্যবাদ দেবার প্রয়োজন পড়ল কেন?
- আরে তুই এত রাগ করছিস কেন? মেয়েটা ভাল। আর তাছাড়া আজকের দিনে কেউ কি এভাবে সাহায্য করে? পরিচিত মানুষেরাই তো কেমন দেখেও--
- তো এখন কি গুন গান করতে হবে? দেখেছো তো মাত্র এক ঘন্টা তাতেই এত? আর পরিচিত মানুষ যা করে করুক। এ করেছে ধন্যবাদ দিয়ে দিয়েছো ব্যাস শেষ। তুমি কিন্তু এখনো জবাব দিলে না কিন্তু কার্ডটা আমার টেবিলে রাখলে কেন?
- আরে না না! গুনগান করতে যাব কেন? আর কার্ডটা তোর টেবিলে রেখেছিলাম যদি তুই চিনিস ওকে তাই আর কি! ঠিক আছে বাবা ভুল হয়ে গেছে একটু শান্ত হ!
- আমার টেবিলে আর কক্ষনো বাইরে থেকে কিছু এনে রাখবে না তাও আবার যে সে মানুষের। আমি পছন্দ করি না। বলেই সুমন উঠে চলে গেল।
নীলিমা একটু অবাক আর একটু ভীত হল ছেলের কথা শুনে। আগেও তো কত কিছু রেখেছে সে কই কখনো তো এমন করেনি! আজ কি খোকার মেজাজ খারাপ? হয়তো কিন্তু কি এমন হল যে মেজাজ খারাপ হল? কোথাও কোন ঝামেলা হয়নি তো?
বিজন যখন ঘরে ঢুকল তখন ঘড়িতে সাড়ে ৯ টা। একটু দেরি হয়ে গেল তার বাসায় ফিরতে। অবশ্য তার ঘরের মানুষগুলো সবাই তার নিজের মত করে বলে এখনো ঠিক করে ঘড়ি মেপে চলতে পারছে। একটু শান্তি পাচ্ছে, না হয় তার অবস্থা ঠিক মান্নান সাহেবের মতই হত। যাহ বাবা এত কিছু ভেবে কি হবে? তার চেয়ে সে যে ভাল আছে। দুবেলা দু মূঠো অন্ন ঘরের সবাই মিলে এক সাথে খেতে পারছে তাই তো অনেক কিছু। স্ত্রী চাকরি করেন, বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হল। তার চাকরির জন্যেও ঘুরতে হচ্ছে না কোথাও। রেজাল্ট ভাল হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যাচ্ছে। আর ছোট দুই ছেলে মেয়ে দিপ আর অনু লেখাপড়াতে ভালই। কোন চিন্তা আপাতত করতে হচ্ছে না। একজীবনে আর কি চাওয়া থাকতে পারে। কিন্তু ঘরে পা দিয়েই আজ কেমন যেন লাগল। যেন ঝড় বয়ে গেছে। মাথার নিঊরন গুলো আজকাল বেশ সক্রিয় তাই সহজেই অনেক কিছু বুঝতে পারে সে আর তাই দেরি না করে ব্যাগটা রেখেই কাপড় না ছেড়ে প্রথম গন্তব্য ছোট গুলোর ঘর। ওখানে গেলেই সব খবর পাওয়া যাবে ঠিক সে জানে।
পেষ্ট কালারের ঘরে ছোট্ট দুটি খাট। একপাশে একটি পড়ার টেবিল আর দেয়ালে নানা ছবি লাগানো। দুই ভাই বোন তাদের মনের মত করে ঘর সাজিয়ে নিয়েছে। এই ঘরে ঢুকলেই কেমন জানি আবার ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে বিজনের। মাঝে মাঝে এমনি এমনি এই ঘরে এসে বসে ছোট দুটার কান্ডকারখানা দেখে। দরজাতে বাবাকে দেখেই অনু উঠে এসে বাবাকে জরিয়ে ধরল। মাথায় হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,
- মামনি, কিরে কিছু হয়েছে নাকি আজকে? এমন থমথমে হয়ে আছে কেন সব?
-বাবা জান আজ...
- এই অনু তুই না আমি বলব-দিপ বাধা দিল।
- এই তুই তো সব সময় বলিস দাদা। আজ আমি বলি না এমন করিস কেন? এই বাবা তুমি বল আমি বলব।
- আচ্ছা ঠিক আছে দিপ আজ বোনকে ছেড়ে দে। আজ অনু বলবে ঠিক আছে?
আস্বস্ত হয়ে অনু বলা শুরু করল, জান বাবা দাদা না আজ খুব রাগ করেছে। মা দাদার টেবিলে কি যেন রেখেছে আর তাই দাদা অনেক জোরে জ়োরে কথা বলেছে মার সঙ্গে। এটুকু বলেই অনু চুপ করে গেল মাকে বাবার জন্যে জল নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেই।
বিজনের জিজ্ঞাসু চোখ দেখে কিছু বলার আগেই শোনা গেল সুমনের গলা।
-মা। একটু কথা ছিল।
-হুম্ম বল।
এক লহমায় ঘরের সবার চোখ সুমনের উপরে। সুমন এক পা এক পা করে ঘরে ঢুকল। সব গুলো মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
- মা আমি ভীষন স্যরি! আমার ওভাবে তোমার সাথে কথা বলা ঠিক হয়নি। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করো না কিন্তু তোমার প্রতি একটা অনুরোধ রইল, এভাবে আমার টেবিলে আর কখনো কিছু রেখ না। প্লিজ!
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে সুমন যেমন মাথা নিচু করে এসেছিল ঠিক তেমন চলে গেল। নীলিমা- বিজন সুমনের চলে যাওয়াটা দেখছিল। এই রেশ খাবার টেবিলেও রইল কিছুটা।
রাতে ঘুমাতে যাবার আগে নীলিমা কার্ডটা বিজনের হাতে দিল। বিড়বিড় করে পড়ল সে।
- চিন্তা করো না নীল। হয়ত সুমনের মন খারাপ ছিল তাই এমনটা হয়েছে। কিছু নিয়ে খুব ডিস্টার্ব থাকায় হঠাৎ রেগে গেছে। ভেব না। ঘুমাও।
(চলবে)
-কে রেখেছে এই কাগজটা আমার টেবিলে? কে রেখেছে?
বেশ জোরে চিৎকার করতে করতেই সুমন ঘর থেকে বেরিয়ে এল। সুমন বাড়ির বড় ছেলে তাই তার সমস্যা মানেই বড় কিছু! চিৎকার শোনার সাথে সাথেই সবাই একরকম দৌড়ে এল।
একে সন্ধ্যার সময় তারউপরে হঠাৎ কি হল ভেবে নীলিমা রান্না ঘর থেকে হম্বিতম্বি করে ছুটে এল। সুমন এসে প্রথমে মায়ের সামনে দাঁড়াল। ক্ষুব্দ গলায় মাকে প্রশ্ন করল,
-মা এই কাগজটা কে আমার টেবিলে রেখেছে বলতে পার? আর রাখলেই আমার টেবিলে কেন? রাখবার কি আর কোন জায়গা ছিল না?
-খোকা, কি হয়েছে? কি আছে ওই কাগজে যে তুই দেখেই অমন চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছিস? দে দেখি কি আছে ওটা তে? বলেই নীলিমা সুমনের হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিল। একটা ভিজিটিং কার্ড!
কার্ডটা দেখেই মা বলল, তুই একটা আচ্ছা মানুষ খোকা! এই একটা ভিজিটিং কার্ড নিয়ে বাসা মাথায় তুলতে হয়? আমি রেখেছিলাম কার্ডটা। এবার বল কি হয়েছে?
সুমন এতক্ষন চুপ করে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখছিল। শেষ শব্দটা বলার সাথে সাথেই আবার গর্জে উঠল কিন্তু এটা কেন আমার টেবিলে, আমার ঘরে থাকবে? কেন রেখেছো? কি কারনে?? কিসের প্রয়োজন এই কার্ডের?
ছেলেকে এত রাগ করতে আর কখনো দেখেছে কিনা নীলিমা ভাবল। দাদার রাগ দেখে আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকে গেল দুইভাই বোন, কাজের লোকও কাজ করতে চলে গেল। বাসার সবাই কি কারনে সুমনকে খুব ভয় পায়! ছেলেকে একরকম টানতে টানতে মা ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসালো। নিজেও বসল সুমনে সোজাসুজি।
তাদের খাবার ঘরটা খুব সাজানো। সবটাই অবশ্য হয়েছে সুমনের বাবার ইচ্ছেতেই। ছিমছাম তবে আলকোজ্জ্বল। খাবার সময়টাতে বেশ আরাম করেই কেউ খেতে পারবে। এক পাশে সম্পুর্ন কাঁচের দেয়াল দিয়ে বসার ঘর থেকে আলাদা করা। হাল্কা অফ হোয়াইট কালারে নীলিমাকে একটু চিন্তিত দেখালেও ক্লান্তিটা ঠিক ধরা যাচ্ছে না। কম্পিঊটার প্রকৌশল থেকে মাত্র ৬ মাস আগে পাস করে বের হওয়া ছেলে যে কিনা কয়েকদিন পরেই বুয়েটের লেকচারার হবে কিছুক্ষন তার মুখের দিকে তাকিয়ে অবস্থাটা বুঝার চেষ্টা করল। তারপরে কার্ডটার দিকে তাকাল। খুব সুন্দর কার্ডটা আর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,Chaity Mazumder, System Engineer.
- এত রাগ করছিস কেন? কি হয়েছে রেখেছি তো? আজকে হঠাৎ অফিস থেকে ফেরার পথে নন্দনে গিয়েছিলাম বাজার করতে তখন দেখা হয়ে গেল। আসার সময় গাড়ীটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখন চৈতী আমাকে বাসায় দিয়ে গেল। তারপরে আমি নিজেই ওর ভিজিটিং কার্ডটা রেখেদিলাম সময় করে একটা ধন্যবাদ- মাকে কথা শেষ করতে দিল না সুমন।
- কেন? গাড়ী থেকে নামার সময় ধন্যবাদ দিয়ে আস নি? তাহলে আবার পরে ঘটা করে ধন্যবাদ দেবার প্রয়োজন পড়ল কেন?
- আরে তুই এত রাগ করছিস কেন? মেয়েটা ভাল। আর তাছাড়া আজকের দিনে কেউ কি এভাবে সাহায্য করে? পরিচিত মানুষেরাই তো কেমন দেখেও--
- তো এখন কি গুন গান করতে হবে? দেখেছো তো মাত্র এক ঘন্টা তাতেই এত? আর পরিচিত মানুষ যা করে করুক। এ করেছে ধন্যবাদ দিয়ে দিয়েছো ব্যাস শেষ। তুমি কিন্তু এখনো জবাব দিলে না কিন্তু কার্ডটা আমার টেবিলে রাখলে কেন?
- আরে না না! গুনগান করতে যাব কেন? আর কার্ডটা তোর টেবিলে রেখেছিলাম যদি তুই চিনিস ওকে তাই আর কি! ঠিক আছে বাবা ভুল হয়ে গেছে একটু শান্ত হ!
- আমার টেবিলে আর কক্ষনো বাইরে থেকে কিছু এনে রাখবে না তাও আবার যে সে মানুষের। আমি পছন্দ করি না। বলেই সুমন উঠে চলে গেল।
নীলিমা একটু অবাক আর একটু ভীত হল ছেলের কথা শুনে। আগেও তো কত কিছু রেখেছে সে কই কখনো তো এমন করেনি! আজ কি খোকার মেজাজ খারাপ? হয়তো কিন্তু কি এমন হল যে মেজাজ খারাপ হল? কোথাও কোন ঝামেলা হয়নি তো?
বিজন যখন ঘরে ঢুকল তখন ঘড়িতে সাড়ে ৯ টা। একটু দেরি হয়ে গেল তার বাসায় ফিরতে। অবশ্য তার ঘরের মানুষগুলো সবাই তার নিজের মত করে বলে এখনো ঠিক করে ঘড়ি মেপে চলতে পারছে। একটু শান্তি পাচ্ছে, না হয় তার অবস্থা ঠিক মান্নান সাহেবের মতই হত। যাহ বাবা এত কিছু ভেবে কি হবে? তার চেয়ে সে যে ভাল আছে। দুবেলা দু মূঠো অন্ন ঘরের সবাই মিলে এক সাথে খেতে পারছে তাই তো অনেক কিছু। স্ত্রী চাকরি করেন, বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বের হল। তার চাকরির জন্যেও ঘুরতে হচ্ছে না কোথাও। রেজাল্ট ভাল হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়েই থেকে যাচ্ছে। আর ছোট দুই ছেলে মেয়ে দিপ আর অনু লেখাপড়াতে ভালই। কোন চিন্তা আপাতত করতে হচ্ছে না। একজীবনে আর কি চাওয়া থাকতে পারে। কিন্তু ঘরে পা দিয়েই আজ কেমন যেন লাগল। যেন ঝড় বয়ে গেছে। মাথার নিঊরন গুলো আজকাল বেশ সক্রিয় তাই সহজেই অনেক কিছু বুঝতে পারে সে আর তাই দেরি না করে ব্যাগটা রেখেই কাপড় না ছেড়ে প্রথম গন্তব্য ছোট গুলোর ঘর। ওখানে গেলেই সব খবর পাওয়া যাবে ঠিক সে জানে।
পেষ্ট কালারের ঘরে ছোট্ট দুটি খাট। একপাশে একটি পড়ার টেবিল আর দেয়ালে নানা ছবি লাগানো। দুই ভাই বোন তাদের মনের মত করে ঘর সাজিয়ে নিয়েছে। এই ঘরে ঢুকলেই কেমন জানি আবার ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে বিজনের। মাঝে মাঝে এমনি এমনি এই ঘরে এসে বসে ছোট দুটার কান্ডকারখানা দেখে। দরজাতে বাবাকে দেখেই অনু উঠে এসে বাবাকে জরিয়ে ধরল। মাথায় হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,
- মামনি, কিরে কিছু হয়েছে নাকি আজকে? এমন থমথমে হয়ে আছে কেন সব?
-বাবা জান আজ...
- এই অনু তুই না আমি বলব-দিপ বাধা দিল।
- এই তুই তো সব সময় বলিস দাদা। আজ আমি বলি না এমন করিস কেন? এই বাবা তুমি বল আমি বলব।
- আচ্ছা ঠিক আছে দিপ আজ বোনকে ছেড়ে দে। আজ অনু বলবে ঠিক আছে?
আস্বস্ত হয়ে অনু বলা শুরু করল, জান বাবা দাদা না আজ খুব রাগ করেছে। মা দাদার টেবিলে কি যেন রেখেছে আর তাই দাদা অনেক জোরে জ়োরে কথা বলেছে মার সঙ্গে। এটুকু বলেই অনু চুপ করে গেল মাকে বাবার জন্যে জল নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেই।
বিজনের জিজ্ঞাসু চোখ দেখে কিছু বলার আগেই শোনা গেল সুমনের গলা।
-মা। একটু কথা ছিল।
-হুম্ম বল।
এক লহমায় ঘরের সবার চোখ সুমনের উপরে। সুমন এক পা এক পা করে ঘরে ঢুকল। সব গুলো মুখের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
- মা আমি ভীষন স্যরি! আমার ওভাবে তোমার সাথে কথা বলা ঠিক হয়নি। কিচ্ছু জিজ্ঞেস করো না কিন্তু তোমার প্রতি একটা অনুরোধ রইল, এভাবে আমার টেবিলে আর কখনো কিছু রেখ না। প্লিজ!
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে সুমন যেমন মাথা নিচু করে এসেছিল ঠিক তেমন চলে গেল। নীলিমা- বিজন সুমনের চলে যাওয়াটা দেখছিল। এই রেশ খাবার টেবিলেও রইল কিছুটা।
রাতে ঘুমাতে যাবার আগে নীলিমা কার্ডটা বিজনের হাতে দিল। বিড়বিড় করে পড়ল সে।
- চিন্তা করো না নীল। হয়ত সুমনের মন খারাপ ছিল তাই এমনটা হয়েছে। কিছু নিয়ে খুব ডিস্টার্ব থাকায় হঠাৎ রেগে গেছে। ভেব না। ঘুমাও।
(চলবে)
May 26, 2009
বলা হয়নি!
**
ওর গায়ের গন্ধটা সব সময় শাওনের ভীষন ভাল লাগে। কাছে গেলেই কি মিষ্টি গন্ধ!! এই গন্ধের জন্যেই কিনা সব সময় অর গায়ে লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেই ইচ্ছে পর্যন্তই….. ভাবে কবে কি বলে ফেলবে, আর তাই কাছে যেতে হয় সাবধানে, সবার অগোচরে।
নীল রঙের শাড়ীতে অসম্ভব সুন্দর দেখায় তাকে। তাই যখনি শাড়ী কিনতে যাবে শাওন তখনি নজর চলে যাবে নীল রঙের শাড়ীর দিকে। একবার হয়েছে কি, পূজোর ঠিক আগে আগে সে কিছু টাকা দিল শাওনকে। টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, নাও টাকাটা দিয়ে তুমি তোমার নিজের জন্যে, আমার জন্যে আর বাসার সবাই জন্যে কিছু না কিছু কিনা নিও। কথা মত সময় করে শাওন শো-রুম গুলো ঘুরতে লাগল। শাড়ীর দোকানে ঢুকেই দুটো শাড়ী পছন্দ হয়ে গেল। টাকা গুনে দেখল ওর জন্যে যদি শাড়ীটা কিনে ফেলে তো নিজের জন্যে আর কিছুই কেনা হবে না। ধুর এত্ত কিছু ভাবার সময় আছে নাকি? নিজের জন্যে না হয় কিছুই কিনলাম না, ওর হাসি মাখা মুখটা তো দেখতে পাব। সেবার বাসায় ফিরে ওর কাছে খুব বকা শুনতে হয়েছিল কিন্তু শাড়ি গুলো হাতে নিয়ে ওর হাসি মাখা মুখটা যেন আর কিছুই মনে রাখতে দিল না। অন্যের জন্যে বেঁচে থাকাটাই যেন সার্থক হয়ে যায়।
**
রাত ৩টা বাজে। হঠাৎ মাথায় একটা হাতের স্পর্শ। নরম হাতের এই ছোঁয়াটা শাওনের খুব পরিচিত। কাজ করতে করতে টেবিলের উপর মাথাটা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছিল। হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলেই সেই মায়াভরা মুখ। দু হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে শাওন বলল, কি ব্যাপার এত রাতে উঠে গেলে যে? ঘুম আসছে না? ও বলল, আমার ঘুম ঠিক হয়েছে কিন্তু তুমি এভাবে ঘুমাচ্ছ কেন? শাওন বলল, ইস জান না তো কালকের মধ্যেই কাজ গুলো জমা দিতে হবে, কাজ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল ছিল না। কথা শেষ হতেই ও উঠে চলে গেল। আবার একটু পড়েই ফিরে এল এককাপ গরম কফি নিয়ে।
নাও কফি খেয়ে কাজ শেষ করো, ওর গলায় অর্ডার দেয়ার স্বর। শাওন চোরা মুখ করে ওর হাতটা ধরে কাছে টেনে উঠে দাড়াল, আচ্ছা ঠিক আছে কাজ শেষ করছি। কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝো আমার কখন কি লাগবে সেটা বল? ও তখন বলে, সময় হোক আগে তারপরে তুমি নিজেই একদিন বুঝবে। তবে একটা কথা মনে রেখ তুমি আমার স্বপ্ন, আর সেতা যেন কোন ভাবেই ভেঙ্গে না যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ও বলল। শাওনের মাঝ থেকে চুপিসারে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কিন্তু বুঝতে দিল না কিন্তু মনে মনে বলল, সে কি আর আমি জানি না? সে জন্যেই তো কাজ করে যাচ্ছি।
পরের দিন বিকালে অফিস থেকে ফিরে দরজায় বেল বাজাতেই ও এসে খুলে দিল খুব তাড়াতাড়ি। মনে হচ্ছিল যেন শাওনের আসার অপেক্ষায় ছিল ও। কি ব্যাপার বলো তো, এত খুশির কি হল?, শাওন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন ছুঁড়ল। তুমি ঘরে যাও আমি আসছি বলেই চলে গেল ও। শাওন একটু অবাক হল নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগটা রেখে খাটে বসল, তখন ও ঘরে এল একটা খাম নিয়ে। খামটা হাতে নিয়ে দেখল, খামেয় গায়ে নিজের নাম লেখা, আর চিঠিটা এসেছে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। খাম খোলার আগেই ও বলল, তোমার MS করার স্কলারশিপ তুমি পেয়ে গেছ, তাহলে এবার চাকরি ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি শুরু করো। ওকে আমি এত খুশি এর আগে দেখেছি কিনা আমার মনে পড়ে না।
**
টেলিফোনের রিংটা বেজেই চলছে। ঘরের মেঝেতে বসে ছিল শাওন। হাত বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করার আগেই লাইন কেটে যায়। কিরে শাওন, এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবি যেতে হবে তো আয় শেষ বারের মত একটি বার দেখে যা, বীনা মাসি বলল। শাওন উঠে দাঁড়ায় বলে, যেতে তো দিতেই হবে মাসি, আমাকে একা ফেলে কেমন করে চলে গেল বলতে পার? একবারের জন্যেও ও ভাবলো না? মাসির চোখে জল। টলমল পায়ে বসার ঘরে এল সে। ঘরের ঠিক মাঝে ও শুয়ে আছে, মাথার পাশে ধুপকাঠি জ্বলছে, মেঝ মাসি গীতা পড়ছেন। পাশে বসে শাওন বসল আর মনে মনে বলল, দেখ একবার তোমার স্বপ্ন আমি পুরন করছি এবং করে যাব। শুধু দেখার জন্যে তুমি রইলে না। অনেকক্ষন ধরে শাওন ওর দিকে তাকিয়ে রইল, হঠাৎ চোখের কোল বেয়ে নেমে এল এক ফোঁটা জল, তোমাকে কখনো বলা হয়নি ভালবাসি। আজ বলছি যদি পার শুনে নাও, মা তোমাকে আমি অনেক অনেক অনেক ভালবাসি। এভাবে তোমার মেয়েকে একা ফেলে কেন চলে গেলে? কেন? বিদায়ক্ষন চলে এল, আর শাওনের বুক থেকে চুপিসারে বের হয়ে এল, মা!
ওর গায়ের গন্ধটা সব সময় শাওনের ভীষন ভাল লাগে। কাছে গেলেই কি মিষ্টি গন্ধ!! এই গন্ধের জন্যেই কিনা সব সময় অর গায়ে লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেই ইচ্ছে পর্যন্তই….. ভাবে কবে কি বলে ফেলবে, আর তাই কাছে যেতে হয় সাবধানে, সবার অগোচরে।
নীল রঙের শাড়ীতে অসম্ভব সুন্দর দেখায় তাকে। তাই যখনি শাড়ী কিনতে যাবে শাওন তখনি নজর চলে যাবে নীল রঙের শাড়ীর দিকে। একবার হয়েছে কি, পূজোর ঠিক আগে আগে সে কিছু টাকা দিল শাওনকে। টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, নাও টাকাটা দিয়ে তুমি তোমার নিজের জন্যে, আমার জন্যে আর বাসার সবাই জন্যে কিছু না কিছু কিনা নিও। কথা মত সময় করে শাওন শো-রুম গুলো ঘুরতে লাগল। শাড়ীর দোকানে ঢুকেই দুটো শাড়ী পছন্দ হয়ে গেল। টাকা গুনে দেখল ওর জন্যে যদি শাড়ীটা কিনে ফেলে তো নিজের জন্যে আর কিছুই কেনা হবে না। ধুর এত্ত কিছু ভাবার সময় আছে নাকি? নিজের জন্যে না হয় কিছুই কিনলাম না, ওর হাসি মাখা মুখটা তো দেখতে পাব। সেবার বাসায় ফিরে ওর কাছে খুব বকা শুনতে হয়েছিল কিন্তু শাড়ি গুলো হাতে নিয়ে ওর হাসি মাখা মুখটা যেন আর কিছুই মনে রাখতে দিল না। অন্যের জন্যে বেঁচে থাকাটাই যেন সার্থক হয়ে যায়।
**
রাত ৩টা বাজে। হঠাৎ মাথায় একটা হাতের স্পর্শ। নরম হাতের এই ছোঁয়াটা শাওনের খুব পরিচিত। কাজ করতে করতে টেবিলের উপর মাথাটা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছিল। হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলেই সেই মায়াভরা মুখ। দু হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে শাওন বলল, কি ব্যাপার এত রাতে উঠে গেলে যে? ঘুম আসছে না? ও বলল, আমার ঘুম ঠিক হয়েছে কিন্তু তুমি এভাবে ঘুমাচ্ছ কেন? শাওন বলল, ইস জান না তো কালকের মধ্যেই কাজ গুলো জমা দিতে হবে, কাজ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল ছিল না। কথা শেষ হতেই ও উঠে চলে গেল। আবার একটু পড়েই ফিরে এল এককাপ গরম কফি নিয়ে।
নাও কফি খেয়ে কাজ শেষ করো, ওর গলায় অর্ডার দেয়ার স্বর। শাওন চোরা মুখ করে ওর হাতটা ধরে কাছে টেনে উঠে দাড়াল, আচ্ছা ঠিক আছে কাজ শেষ করছি। কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝো আমার কখন কি লাগবে সেটা বল? ও তখন বলে, সময় হোক আগে তারপরে তুমি নিজেই একদিন বুঝবে। তবে একটা কথা মনে রেখ তুমি আমার স্বপ্ন, আর সেতা যেন কোন ভাবেই ভেঙ্গে না যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ও বলল। শাওনের মাঝ থেকে চুপিসারে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কিন্তু বুঝতে দিল না কিন্তু মনে মনে বলল, সে কি আর আমি জানি না? সে জন্যেই তো কাজ করে যাচ্ছি।
পরের দিন বিকালে অফিস থেকে ফিরে দরজায় বেল বাজাতেই ও এসে খুলে দিল খুব তাড়াতাড়ি। মনে হচ্ছিল যেন শাওনের আসার অপেক্ষায় ছিল ও। কি ব্যাপার বলো তো, এত খুশির কি হল?, শাওন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন ছুঁড়ল। তুমি ঘরে যাও আমি আসছি বলেই চলে গেল ও। শাওন একটু অবাক হল নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগটা রেখে খাটে বসল, তখন ও ঘরে এল একটা খাম নিয়ে। খামটা হাতে নিয়ে দেখল, খামেয় গায়ে নিজের নাম লেখা, আর চিঠিটা এসেছে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। খাম খোলার আগেই ও বলল, তোমার MS করার স্কলারশিপ তুমি পেয়ে গেছ, তাহলে এবার চাকরি ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি শুরু করো। ওকে আমি এত খুশি এর আগে দেখেছি কিনা আমার মনে পড়ে না।
**
টেলিফোনের রিংটা বেজেই চলছে। ঘরের মেঝেতে বসে ছিল শাওন। হাত বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করার আগেই লাইন কেটে যায়। কিরে শাওন, এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবি যেতে হবে তো আয় শেষ বারের মত একটি বার দেখে যা, বীনা মাসি বলল। শাওন উঠে দাঁড়ায় বলে, যেতে তো দিতেই হবে মাসি, আমাকে একা ফেলে কেমন করে চলে গেল বলতে পার? একবারের জন্যেও ও ভাবলো না? মাসির চোখে জল। টলমল পায়ে বসার ঘরে এল সে। ঘরের ঠিক মাঝে ও শুয়ে আছে, মাথার পাশে ধুপকাঠি জ্বলছে, মেঝ মাসি গীতা পড়ছেন। পাশে বসে শাওন বসল আর মনে মনে বলল, দেখ একবার তোমার স্বপ্ন আমি পুরন করছি এবং করে যাব। শুধু দেখার জন্যে তুমি রইলে না। অনেকক্ষন ধরে শাওন ওর দিকে তাকিয়ে রইল, হঠাৎ চোখের কোল বেয়ে নেমে এল এক ফোঁটা জল, তোমাকে কখনো বলা হয়নি ভালবাসি। আজ বলছি যদি পার শুনে নাও, মা তোমাকে আমি অনেক অনেক অনেক ভালবাসি। এভাবে তোমার মেয়েকে একা ফেলে কেন চলে গেলে? কেন? বিদায়ক্ষন চলে এল, আর শাওনের বুক থেকে চুপিসারে বের হয়ে এল, মা!
একটা প্রশ্ন আর......
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর। আর সেই কন্ঠস্বরে কথা বলতে চাওয়ার কি অসম্ভব ব্যাকুলতা!! আমি অবাক হয়ে যাই। কেউ কারোর সাথে কথা বলতে এতটা ব্যাকুল থাকতে পারে?? নববর্ষের এই আনন্দের মাঝেও প্রিয় মানুষ গুলোকে বিশেষ দিনে কাছে না পাবার কষ্টগুলো আমাকে ছুঁইয়ে যায়। কি অদ্ভুত আমাদের সম্পর্ক গুলো। কাছে থেকেও অপরিচিত আর দূরে থেকেও কত দিনের যেন চেনা!
- কিংস এর পাশে বসে না না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার কথা ভাবছিলাম আর ফোন করছিলাম। কিন্তু কোন এক কারনে তোমার ফোন এ লাইন পাচ্ছিলাম না। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তোমার সাথে কথা বলি। কিছু প্রশ্ন এসে মনে খোঁচাখুঁচি করছিল। ভাবছিলাম তখনি করি কিন্তু করা আর হয়ে উঠে নি।
- হুম্ম বল তোমার প্রশ্ন দেখি যদি উত্তর আমার জানা আছে কিনা। যদি থাকে তো উত্তর পাবে!
- আমি জানি তোমার কাছে আমার প্রশ্নের উত্তর মিলবে। আমি অনেকক্ষন কিংসের পাশে দাঁড়িয়ে বয়ে চলা জলের দিকে তাকিয়েছিলাম। আর ভাবছিলাম, জলকে আমরা এত ভালবাসি কেন? কেন জল ছাড়া আমাদের চলে না?? বলতে পার? আমাকে জল, নদী, সমুদ্রগুলো এতটানে জান?? কেন টানে এত বলো দেখি। আমি কেন এর উত্তর খুঁজে পাই না?
- জলের একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো, জল শুধু বয়েই চলে। বয়ে চলাই তার চিরায়ত নিয়ম। কখনো ফিরে তাকায় না। যত বাধাই আসুক না কেন জল তার আপন গতিতে চলতে থাকে। উঁচু নিচু সব জায়গাতেই স্রোত একি ভাবে চলে। আমরা সেটা পারি না। আমরা দুঃখ কষ্টে ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু জল, সে কখনো ভেঙ্গে পড়ে না। নুড়ি, পাথর কত কিছু জলের চলার পথে থাকে। কিন্তু সে কারোর বাধা মানে না। নদীর জলের কথাই ভাব, কি সুন্দর বয়ে চলে। আর এই যাবার পথে দুকুলে কত কি না দিয়ে যায়। কখনো প্রাচুর্য আর কখনো দরিদ্র করে রেখে যায়। কিন্তু যেটা করে সেটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই জলের। সমুদ্র কত বিশাল দেখ!! তুমি, আমি অথবা আমরা কি কখনো পারব এতটা বিশাল হতে?? কত কিছুকে জল তার নিজের মধ্যে ধারন করেছে, কত মুল্যবান জিনিস, কত জীবন। জল কি তাদের দিক থেকে একবারের জন্যেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? নেয়নি, বরং পরম মমতায় নিজের মাঝে আগলে রেখেছে।
- আর?
- আর?? আর আমাদের চোখের জলের কথা বললে বলা যায়। কষ্ট পেলে আমরা কাঁদি। আর আমাদের কষ্ট গুলো জল হয়ে আমাদের কিছুটা হাল্কা করে দিয়ে যায়। এই যে পৃথিবীতে আমরা আছি, ভেবে দেখ আমরা কি কেউ কারোর জন্যে থেমে আছি? আজকে কেউ মরে গেলে, কালকেই আমাদের মনে তার কথা ফিকে হয়ে আসে সে যত আপনি হোক। জল ও তেমন, কারোর জন্যে থেমে থাকে না। বৃষ্টি তো তোমার খুব ভাল লাগে। বৃষ্টির আগে আর পরে কখনো প্রকৃতিটাকে দেখেছো?
- কেন বলতো?
- গাছে লতায় পাতায় বৃষ্টি হবার আগে অনেক ধুলোবালি জমে থাকে। শুধু গাছেই না, পুরো বায়ুমন্ডল কি রকম উত্তপ্ত থাকে দেখেছো? আর বৃষ্টি হবার পরে সব কিছু অনেক পরিষ্কার হয়ে যায়। যেন নতুন রূপে সাজে প্রকৃতি। জল যখন উপর থেকে পরে তখন সোজা নিচে চলে যায় আর যাবার পথে সব কিছুকে শুদ্ধ করে দিয়ে যায়। অই গল্পটা পড়েছো, যেখানে গঙ্গাতে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যায় বলা আছে। ওই যে শিব আর পার্বতী মিলে মানুষকে পরীক্ষা করতে আসে।
- হুম মনে আছে। মনে বিশ্বাস থাকলে পাপ দূর হয়ে যায়, গঙ্গার জলটাও সেই বিশ্বাস এরই একটা অংশ।
- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। আর এই জন্যেই মনে হয় জলকে আমরা এত ভালবাসে। যে কিনা নিজে নিম্নগামী হয়েও অন্যদেরকে পবিত্র করে দিয়ে যায়। বলে যায় নিচে যাওয়াটা অনেক সহজ কিন্তু উপরে মাথা উঁচু করে থাকা অনেক কষ্টের। মাটিতে পা রেখেই তবে উপরে তাকাতে হয়। এবার তুমি ভেবে দেখ কেন তোমার সমুদ্র, জল, নদী এত টানে।
- বুঝতে পেরেছি আমি। দেখেছো আমি বলেছিলাম তোমার কাছেই আমার উত্তর আছে। তুমি কি সুন্দর উত্তর দিয়ে দিলে আর আমিও পেয়ে গেলাম।
আর অনেক কথার পরে, আমাদের কথা শেষ হল। ভাবছেন কার সাথে কথা বলেছি? এ আমার খুব ভাল একটা বন্ধু, যে কিনা সব সময় ভাবে আমার কাছে তার সব কথার উত্তর আছে। জানি না ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পেরেছি কিনা। তবে চেষ্টা করেছি নিজের মত করে বুঝিয়ে দিতে। কারন মাঝে মাঝে আমাকেও ওর করা এই প্রশ্নটি খুব ভাবায়।
- কিংস এর পাশে বসে না না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার কথা ভাবছিলাম আর ফোন করছিলাম। কিন্তু কোন এক কারনে তোমার ফোন এ লাইন পাচ্ছিলাম না। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তোমার সাথে কথা বলি। কিছু প্রশ্ন এসে মনে খোঁচাখুঁচি করছিল। ভাবছিলাম তখনি করি কিন্তু করা আর হয়ে উঠে নি।
- হুম্ম বল তোমার প্রশ্ন দেখি যদি উত্তর আমার জানা আছে কিনা। যদি থাকে তো উত্তর পাবে!
- আমি জানি তোমার কাছে আমার প্রশ্নের উত্তর মিলবে। আমি অনেকক্ষন কিংসের পাশে দাঁড়িয়ে বয়ে চলা জলের দিকে তাকিয়েছিলাম। আর ভাবছিলাম, জলকে আমরা এত ভালবাসি কেন? কেন জল ছাড়া আমাদের চলে না?? বলতে পার? আমাকে জল, নদী, সমুদ্রগুলো এতটানে জান?? কেন টানে এত বলো দেখি। আমি কেন এর উত্তর খুঁজে পাই না?
- জলের একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো, জল শুধু বয়েই চলে। বয়ে চলাই তার চিরায়ত নিয়ম। কখনো ফিরে তাকায় না। যত বাধাই আসুক না কেন জল তার আপন গতিতে চলতে থাকে। উঁচু নিচু সব জায়গাতেই স্রোত একি ভাবে চলে। আমরা সেটা পারি না। আমরা দুঃখ কষ্টে ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু জল, সে কখনো ভেঙ্গে পড়ে না। নুড়ি, পাথর কত কিছু জলের চলার পথে থাকে। কিন্তু সে কারোর বাধা মানে না। নদীর জলের কথাই ভাব, কি সুন্দর বয়ে চলে। আর এই যাবার পথে দুকুলে কত কি না দিয়ে যায়। কখনো প্রাচুর্য আর কখনো দরিদ্র করে রেখে যায়। কিন্তু যেটা করে সেটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই জলের। সমুদ্র কত বিশাল দেখ!! তুমি, আমি অথবা আমরা কি কখনো পারব এতটা বিশাল হতে?? কত কিছুকে জল তার নিজের মধ্যে ধারন করেছে, কত মুল্যবান জিনিস, কত জীবন। জল কি তাদের দিক থেকে একবারের জন্যেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? নেয়নি, বরং পরম মমতায় নিজের মাঝে আগলে রেখেছে।
- আর?
- আর?? আর আমাদের চোখের জলের কথা বললে বলা যায়। কষ্ট পেলে আমরা কাঁদি। আর আমাদের কষ্ট গুলো জল হয়ে আমাদের কিছুটা হাল্কা করে দিয়ে যায়। এই যে পৃথিবীতে আমরা আছি, ভেবে দেখ আমরা কি কেউ কারোর জন্যে থেমে আছি? আজকে কেউ মরে গেলে, কালকেই আমাদের মনে তার কথা ফিকে হয়ে আসে সে যত আপনি হোক। জল ও তেমন, কারোর জন্যে থেমে থাকে না। বৃষ্টি তো তোমার খুব ভাল লাগে। বৃষ্টির আগে আর পরে কখনো প্রকৃতিটাকে দেখেছো?
- কেন বলতো?
- গাছে লতায় পাতায় বৃষ্টি হবার আগে অনেক ধুলোবালি জমে থাকে। শুধু গাছেই না, পুরো বায়ুমন্ডল কি রকম উত্তপ্ত থাকে দেখেছো? আর বৃষ্টি হবার পরে সব কিছু অনেক পরিষ্কার হয়ে যায়। যেন নতুন রূপে সাজে প্রকৃতি। জল যখন উপর থেকে পরে তখন সোজা নিচে চলে যায় আর যাবার পথে সব কিছুকে শুদ্ধ করে দিয়ে যায়। অই গল্পটা পড়েছো, যেখানে গঙ্গাতে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যায় বলা আছে। ওই যে শিব আর পার্বতী মিলে মানুষকে পরীক্ষা করতে আসে।
- হুম মনে আছে। মনে বিশ্বাস থাকলে পাপ দূর হয়ে যায়, গঙ্গার জলটাও সেই বিশ্বাস এরই একটা অংশ।
- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। আর এই জন্যেই মনে হয় জলকে আমরা এত ভালবাসে। যে কিনা নিজে নিম্নগামী হয়েও অন্যদেরকে পবিত্র করে দিয়ে যায়। বলে যায় নিচে যাওয়াটা অনেক সহজ কিন্তু উপরে মাথা উঁচু করে থাকা অনেক কষ্টের। মাটিতে পা রেখেই তবে উপরে তাকাতে হয়। এবার তুমি ভেবে দেখ কেন তোমার সমুদ্র, জল, নদী এত টানে।
- বুঝতে পেরেছি আমি। দেখেছো আমি বলেছিলাম তোমার কাছেই আমার উত্তর আছে। তুমি কি সুন্দর উত্তর দিয়ে দিলে আর আমিও পেয়ে গেলাম।
আর অনেক কথার পরে, আমাদের কথা শেষ হল। ভাবছেন কার সাথে কথা বলেছি? এ আমার খুব ভাল একটা বন্ধু, যে কিনা সব সময় ভাবে আমার কাছে তার সব কথার উত্তর আছে। জানি না ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পেরেছি কিনা। তবে চেষ্টা করেছি নিজের মত করে বুঝিয়ে দিতে। কারন মাঝে মাঝে আমাকেও ওর করা এই প্রশ্নটি খুব ভাবায়।
শব্দ চোর!
লেখালেখিটা কোন ভাবেই continue করতে পারছি না বেশ কয়েকদিন ধরে। হয় আমার গনকযন্ত্র মহাশয় রাগ করেন না হয় ব্যস্ততা। সব কিছুকে একদিকে রেখে যেই লিখতে বসেছি তখনি দেখছি মাথায় লেখার আইডিয়া তো আছে কিন্তু কোন শব্দ মাথা থেকে বের হয়ে ঠিকঠাক মত কিবোর্ড হয়ে গনকযন্ত্রের পর্দায় ভেসে উঠছে না। যা উঠছে তাও ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ডায়েরীটাও ঠিকঠাক মত লিখতে পারছি না। কি হয়েছে আমার??
কারন খুঁজতে গিয়ে আবিস্কার করলাম, কিছু শব্দ আমার চুরি গেছে!! আর কিছু শব্দ আমার সাথে অভিমান করেছে!! অভিমানির অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছিলাম আর করতে করতেই আজকের এই লেখাটা লিখে ফেললাম কিন্তু যে গুলো চুরি গেছে সেগুলোর কি করি?? মহা ভাবনায় আমি। শেষ পর্যন্ত কিনা IC, Circuit ছেড়ে দিয়ে আমাকে চোর ধরার কাজে নামতে হবে?? এ কেমন পরিহাস! এই ছিল আমার অদৃষ্টে?
কি আর করা আমি বের হলাম আমার শব্দ গুলো খুঁজতে। যত যাই কিছু হোক না কেন নিজের জিনিস নিয়ে তো আর অবহেলা করা যায় না। চোর খুঁজতে বের হয়ে আমার ত্রাহি অবস্থা!! এদিক খুঁজি পাই না। সেদিকে কাউকে জিজ্ঞেস করি বলে দেখে নাই। কি মুশকিল এখন আমি কি করি?? দিন পেরিয়ে রাত আসে। রাত গভীর হয় আর সপ্তাহের শেষের দিন গুলো শেষ হবার পথে.........কিন্তু আমি একটা বর্ণও লিখি নি। এরকম সময় আমার আর কখনো গেছে কিনা সন্দেহ। কি যে কষ্ট লাগছিল বোঝাতে পারব না।
অনেক রাতে একজনকে বললাম, জান আমার শব্দ গুলো হারিয়ে গেছে। কিছুই লিখতে পারছি না। এমন আমার কখনো হয়নি। আমার মন খারাপ দেখে উত্তর দিল, তুমি ঠিক ঠিক খুঁজে দেখেছ? কি লিখবে আমায় বল দেখি আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারি কিনা। আমি বলি, না লাগবে না, আমি আরো খুজে দেখি তুমি বরং থাক। সে বলে, আচ্ছা আমি আছি। কিছু করতে পারলে বলো। বলেই একটা হাসি দিল!! আমি এদিকে কষ্টে আমার শব্দ গুলোকে খুঁজছি আর উনি এখানে হাসছেন। আমার কষ্ট আমি কোথায় রাখি আর............
হঠাৎ মনে হল শুধু কি শব্দ হারিয়েছে?? চোরটা আর কিছু নিয়ে যায়নি তো। আর তারপরেই দেখলাম আরো কিছু জিনিস আমার হারিয়ে গেছে। নতুন কিছুও আবার এসেছে আমার কাছে! কি অদ্ভুত!! এমনো হয় কিছু চুরি হয়ে যাবার পরে তা আবার নতুন কোন কিছু দিয়ে পুরন হয়ে যায়?? জানা ছিল না!!
যাই হোক শেষ পর্যন্ত আমি আমার শব্দ চোরকে ধরতে পেরেছি কিন্তু আমার শব্দ গুলো এখনো ফেরত পাই নি। কারন চোরটা বড় বাঁদর আর একটু ত্যাদোঁড় ও বটে। তবে আমি শব্দ গুলো ফিরে পাবার আপ্রান চেষ্টা করছি। দেখি কি হয় শেষ পর্যন্ত বাঁদরটা শব্দ গুলো বিনা শর্তে ফেরত দেয় কিনা!!
কারন খুঁজতে গিয়ে আবিস্কার করলাম, কিছু শব্দ আমার চুরি গেছে!! আর কিছু শব্দ আমার সাথে অভিমান করেছে!! অভিমানির অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছিলাম আর করতে করতেই আজকের এই লেখাটা লিখে ফেললাম কিন্তু যে গুলো চুরি গেছে সেগুলোর কি করি?? মহা ভাবনায় আমি। শেষ পর্যন্ত কিনা IC, Circuit ছেড়ে দিয়ে আমাকে চোর ধরার কাজে নামতে হবে?? এ কেমন পরিহাস! এই ছিল আমার অদৃষ্টে?
কি আর করা আমি বের হলাম আমার শব্দ গুলো খুঁজতে। যত যাই কিছু হোক না কেন নিজের জিনিস নিয়ে তো আর অবহেলা করা যায় না। চোর খুঁজতে বের হয়ে আমার ত্রাহি অবস্থা!! এদিক খুঁজি পাই না। সেদিকে কাউকে জিজ্ঞেস করি বলে দেখে নাই। কি মুশকিল এখন আমি কি করি?? দিন পেরিয়ে রাত আসে। রাত গভীর হয় আর সপ্তাহের শেষের দিন গুলো শেষ হবার পথে.........কিন্তু আমি একটা বর্ণও লিখি নি। এরকম সময় আমার আর কখনো গেছে কিনা সন্দেহ। কি যে কষ্ট লাগছিল বোঝাতে পারব না।
অনেক রাতে একজনকে বললাম, জান আমার শব্দ গুলো হারিয়ে গেছে। কিছুই লিখতে পারছি না। এমন আমার কখনো হয়নি। আমার মন খারাপ দেখে উত্তর দিল, তুমি ঠিক ঠিক খুঁজে দেখেছ? কি লিখবে আমায় বল দেখি আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারি কিনা। আমি বলি, না লাগবে না, আমি আরো খুজে দেখি তুমি বরং থাক। সে বলে, আচ্ছা আমি আছি। কিছু করতে পারলে বলো। বলেই একটা হাসি দিল!! আমি এদিকে কষ্টে আমার শব্দ গুলোকে খুঁজছি আর উনি এখানে হাসছেন। আমার কষ্ট আমি কোথায় রাখি আর............
হঠাৎ মনে হল শুধু কি শব্দ হারিয়েছে?? চোরটা আর কিছু নিয়ে যায়নি তো। আর তারপরেই দেখলাম আরো কিছু জিনিস আমার হারিয়ে গেছে। নতুন কিছুও আবার এসেছে আমার কাছে! কি অদ্ভুত!! এমনো হয় কিছু চুরি হয়ে যাবার পরে তা আবার নতুন কোন কিছু দিয়ে পুরন হয়ে যায়?? জানা ছিল না!!
যাই হোক শেষ পর্যন্ত আমি আমার শব্দ চোরকে ধরতে পেরেছি কিন্তু আমার শব্দ গুলো এখনো ফেরত পাই নি। কারন চোরটা বড় বাঁদর আর একটু ত্যাদোঁড় ও বটে। তবে আমি শব্দ গুলো ফিরে পাবার আপ্রান চেষ্টা করছি। দেখি কি হয় শেষ পর্যন্ত বাঁদরটা শব্দ গুলো বিনা শর্তে ফেরত দেয় কিনা!!
March 01, 2009
শুরুতো হলো, এবার?
চারদিকে থই থই জল, এর মাঝে একজন প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন। পাশে শুধু ডাক্তার আর একজন নার্স। স্বামী মানুষটি বাইরে অপেক্ষা করছেন। বাইরে বন্যার জল, আর থেমে থেমে বৃষ্টি। এর মধ্যেও বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। প্রসব বেদনায় কাতরানো মহিলাটি নিজে একজন ডাক্তার, মফস্বলে তার পোষ্টিং, যেখানে তার শ্বশুর বাড়ী। বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি খবর পেলেন ছেলে লোক পাঠিয়েছে যাবার জন্যে। ভদ্র মহিলাটি না গিয়ে লোক মারফরত খবর পাঠালেন, যদি ছেলে হয় তবেই তিনি দেখতে যাবেন নচেৎ নয়।
সংবাদ বাহক যখন খবরটি মহিলাটির স্বামীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল তখন সদ্য মা হতে যাওয়া মানুষটাও কথাটা শুনতে পায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলে, মেয়ে হোক অথবা ছেলে তাকে মানুষের মত মানুষ করে তুলবে সে। মেয়ে হলে তাকে পৌছে দেবার চেষ্টা করবে সফলতার চুড়ায়। যেন আজকে যে মানুষ গুলু তার অনাগত সন্তান কে এত কথা বলছে তারাই কাল তাকে নিয়ে গর্ব করবে, তার পরিচয়ে পরিচিত হবে। প্রতীক্ষার অবশেষে ছোট্ট একটা প্রান চিৎকার করে জানিয়ে দিল, আমি এসেছি। তার স্বামীর নির্দেশে লোক লজ্জার ভয়ে মেয়েটার শ্বাশুড়ি শেষ পর্যন্ত এসেছিলেন, হাজার হোক বংশের প্রথম সন্তান বলে কথা। কিন্তু ঐ যে মেয়ে, সেটা ভুলে যেতে না পারলেন শ্বাশুড়ি, না পারলেন সদ্য পৃথিবীতে আসা মেয়েটার বাবা। আজকে এই আমি, অনুসুয়া সেদিনের সেই মেয়ে, অনাহুত কিন্তু মায়ের স্বপ্নে লালিত।
মেয়েরা নাকি বাবা ঘেঁষা হয়। আমি তার উলটো। আমি মা নেওটা। বাবা অনেক চেষ্টা করতেন তার এই অনাহুত মেয়েটার প্রতি বিরাগ ভাব না দেখাতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথাও না কোথাও ধরা পড়ে যেতেন। বড় হতে হতে যেন মেনেই নিয়েছিলাম এই “অনাহুত” শব্দটি। আমার মেরুদন্ডটাকে শক্ত আর খাড়া রাখার জন্যে ওই একটা শব্দই যেন যথেষ্ট! কিন্তু মায়ের স্বপ্ন দেখা মন আমাকে দিয়েছে অন্যরকম হবার প্রেরনা, একটু আলাদা। তারপরেও আজকাল মনে হয় আমি খুব সাধারন। আমার মধ্যে কোন বিশেষ বলে কিছু নেই। আমি খুঁজে চলেছি সোলমেট, কিন্তু তারপরেও যখন খুব কাছেও বন্ধুরা বলে মানুষটা তো ৪ ফূটি কি দরকার এত বড় স্বপ্ন দেখার? একটু আস্তে পায়ের নীচে দেখ মাটি আছে কিনা এরকম হাজারো কথা।
কিন্তু আমি জানি, বিশ্বাস করি, আমার পায়ের নীচে মাটি আছে। আকাশে আমার মনটা অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেও আমি জানি আমার পা দুটি কখনো কাদা মাটিতে কখনো শক্ত-তপ্ত মাটিতে আছে। মনটা কে এখন এতটাই শক্ত করে ফেলেছি যে আজ আর চেনা শোনা মুখ, প্রিয় মানুষ গুলো, কাছের মানুষ গুলো যখন আমার মনের আকাশে মেঘ জমিয়ে দেয় তখন আর আগের মত মন খারাপ হয় না। ছোট ছোট নুড়ি পাথরের মত দিন গুলো পার হয়ে যায়। আমার কাজে দিন গুলো যেন আরো রঙ্গিন হয়ে উঠে আর আমার প্রিয় মানুষ গুলোর মুখগুলো ভরে উঠে অদ্ভুত এক আলোয়। এ কি আমি কখনো কিনতে পারব? না এমনি এমনি দেখতে পাব! এগুলো আমার কাছে অমুল্য। রঙ পেন্সিল, জাহাজের ডাক, জমকালো রাতের তারারা যেন আমার ফেরারি মনকে স্বপ্নের দেশে নিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশী আর কি চাই?
ভাবছিলাম আমার গল্প বলব আপনাদের সবাইকে। কিন্তু দেখলেন তো শুরুটা কি রকম এলোমেলো হয়ে গেল। গল্পের শুরু করব কিভাবে তাই বলতে গিয়ে একগাদা অগোছালো কথা বলতে হল। ভীষন স্বপ্নবাজ আমি, আমার লেখিকা বন্ধুটি শিখিয়ে দিয়েছিল একদিন কি করে স্বপ্ন দেখতে হয়! আর বাস্তব পরিস্থিতি শিখিয়ে দিয়েছিল শত বাধা, কষ্ট সত্বেও কি করে স্বপ্নে বাঁচতে হয়, কি করে বেঁচে থাকতে হয়। জানি না আমার গল্প আপনাদের ভাল লাগবে কিনা। তারপরেও বলে যাওয়া। টুকরো টুকরো ঘটনা আর কল্পনার পাখনা জানি না আপনাদের আমার সাথে উড়িয়ে নিতে পারবে কিনা। আজ বিদায় নিচ্ছি। হয়ত আবার দেখা হবে।
এটাকে কি শুরু বলা যায়?
হাল্কা রোদের মাঝে ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বাতাসটা এত মৃদু যে, রোদের তাপটা গায়ে লাগতে পারছে না। রাস্তাটাও খুব নীরব, আশেপাশে মানুষজন খুব কম, যারা আছে তারাও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। এক পশলা ধুলোবিহীন বাতাস এসে লাগল মুখে, পাশাপাশি হাঁটছি আমরা দুজন। এর আগেও আমরা হেঁটেছি, কথা বলতে বলতে হাঁটা। একটা পলাশের গাছের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক আমার লেখিকা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি অত ভাবছ বলত? পলাশের দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছ যে?
বসন্ত এসে গেছে প্রকৃতিতে, ওই যে দেখ! সত্যি ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক বসন্ত এসে গেছে। একটু হেসেই বলল, ভাবছিলাম তোমার কথা, তোমার গল্পের কথা। শুরুটা করব কিভাবে?
আমার জোরে হাসি শুনেই বলল, আরে বাবা রাস্তায় দাড়িয়ে আছ তাও কি মনে করিয়ে দিতে হবে নাকি? ? খুবতো বললে গল্প শোনাবে, এবার শুরুটাও শুরু করে দাওতো। হাল্কা অভিমানি সুর।
না না তা হবে না। আচ্ছা তোমার শুরু কোথা থেকে?
আমার জন্ম থেকে। কিন্তু আমি সেভাবে শুরু করতে চাই না। তোমার পল্পটা একটু অন্যভাবে শুরু হোক, একটু আলাদা ভাবে। সবার চেয়ে আলাদা তুমি। আচ্ছা তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয়টা কবে হয়েছিল বলতে পার?
হুম্ম খুব আছে। আমি মাথা নিচু করে বলি।
তখন আমি মনে হয় স্কুলে পড়ি। আমার লেখিকা বলে।
না না। স্কুলে না ভুল বললে। তোমার এস. এস. সি. পরীক্ষার পরে। স্কুলে আমি তোমার সাথে পরিচয় হতে চেয়েও আমি পারিনি। তুমি আমার দিকে কখনো ফিরেও তাকাতে না। খুব কষ্ট হতো তখন। তোমার উপযুক্ত হয়ে উঠতে কত না চেষ্টা করেছি আমি, একটানে বলে গভীর নিশ্বাঃস নেই আমি আর তুমি যে বললে পরিচয়ের কথা সেটা এর মধ্যে হয়ে গেছে। এবারতো শুরু করার পালা গল্প।
একটু ফাঁকা একটা জায়গা দেখে বসে পড়ি আমরা দুজনে।
একটা সময় ভাবতাম আমাকে দিয়ে বুঝিবা কিছুই হবে না। যখন পৃথিবীতে আসি তখন থেকেই নিজেকে সব সময় অনাহুত হিসেবেই পেয়ে এসেছি, দেখে এসেছি। তোমাকে দেখে আমি আবার আমাকে খুঁজে পেয়েছিলাম। স্বর্ণলতার মত তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে উঠার চেষ্টা করতে শুরু করলাম। একটা বইয়ের দোকানে তুমি বই খুঁজছিলে। আমি একটু সুযোগ পেয়ে তোমার কাছে গিয়ে তোমায় বললাম, তিন গোয়েন্দার বই পড়তে পার। তূমি আমার দিকে তাকিয়ে বললে, তোমার যা ভাল লাগবে সেটা আমারও যে ভাল লাগতে হবে তার কোন মানে নেই। আমার রবি ঠাকুরের “ডাকঘর” ভাল লেগেছে আমি ওটাই নেব। তুমি চাইলে এটা কিনতে পার। আমি সেদিন কোন বই কিনিনি। বলেছিলাম, তোমার একটু সময় হবে? যদি কিছু মনে না কর তো একটু কথা বলব। তুমি সেদিন না বলনি আর তাই আমি আজ তোমার সাথে। তারপরে কিছুক্ষনের নীরবতা।
একটু পরেই আবার, তুমি অনেককিছুই জান না। তোমার সাথে আমার কথা বলার যে কি আগ্রহ ছিল বলে বুঝাতে পারবো না। ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে আমি বন্ধুত্ব করব। তুমি আমাকে যেন চিনতেই না! সেদিন কথা বলতে বলতে বুঝেছিলাম আকাশের মত তুমি, নদীর জল যেমন করে বয়ে চলে ঠিক তেমনি তুমিও বয়ে চল আর আমাকেও তুমি ভাসিয়ে নিয়ে গেছো তোমার স্রোতে। গাছে ফুল ফোটে আবার ঝরেও যায়। তুমিও ঠিক ওই ফুলটার মত, কিন্তু তুমি ঝরে গেলেও মনে একটা গভীর ছাপ রেখে যাও এবং তুমি আমাকেই এটা শিখিয়ে দিয়েছো এত দিনে। মনের কথা গুলো কাউকে বলার সুঝোগ হয়ে উঠেনি। ভাবতাম কি করে বলতে হয়। কিন্তু ওই ভাবনাতেই আমার সারা, মুখ ফুটে বলা হয়নি।
আবার আমরা হাটঁতে শুরু করেছি আমরা। মাথার উপর দিয়ে একটা প্লেন ঊড়ে গেল। তোমার মনে আছে আমরা দুজনেই ভাবেছিলাম ওই আকাশে উড়াল দেব। আকাশে নিজেদের ঘর বানাবো। তুমি স্বপ্ন দেখতে আর আমাকেও দেখাতে। ধানের খেতের মাঝের চিকন আইল ধরে অনেকটা পথ হেটেছি আর অনুভব করেছি প্রকৃতি কথা, সুর। কখন যদি ভুলে আমাদের আড়ি হয়ে যেত তুমি আথবা আমি যে কেউ গিয়ে আগে কথা বলতাম। হা হা হা হা হা।
আড়ি আড়ি/ বন্ধু তোমার সাথে আড়ি আড়ি/ বড্ড তোমার তাড়াতাড়ি/ তুমি থাক না অবেলায়/ আমি একা জানালায়, সন্ধের আগে সুর্যের মত পশ্চিমে দাও পাড়ি। বিড়বিড়ি করে গেয়ে উঠি দুজনে।
বন্ধুত্ব টা আসলেই আমাদের ওরকম। পাশাপাশি হেটে চলা, ঠিক যেন ছায়াটি। আচ্ছা অনেকটা তো হল আমার কথা বলা। এবার বলতো তোমার গল্প, লেখিকা শুধায়।
আমি বলি বন্ধু তুমি যার নাম দিয়েছ অনুসুয়া তার গল্পটাতো এভাবেই শুরু করতে হবে। রঙ জিনিসটা চিনতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। গাছের নিচে বসে অলস সময় কাটানোটা আমার জন্যে ক্লান্তির কাজ ছিল। পথ ছিল, রথ ছিল, চলে যাওয়া ছিল কিন্তু কিভাবে পথিক হতে হয় জানা ছিল না। পথে হাজারো মুখ ছিল তার আড়ালে ছিল হাজারো সুখ-দুঃখের সাতকাহন। কিন্তু এর মাঝে চেনা স্পর্শ গুলোকে চিনতে আমার সময় লেগেছিল। হাসির আড়ালেও যে একটা নিস্তব্ধতা থাকতে পারে বুঝিনি অথবা বুঝতে চাইনি। পাথর হয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে এসেছি। জোনাকির আলোতে মনকে হারিয়ে ফেলি, আবছায়া জানালার কাঁচে আজ আমি রূপকথার ছবি আকিঁ। ছলছল হাওয়ায় খুঁজে ফিরি পুরানো আঙ্গুলের ছোঁয়া। কি পারবেতো এবার আমার গল্পের শুরুটা করতে?
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যাই আমরা, হয়ত সেই জমকালো চাঁদের দেশে। মন হয়ে যায় ফেরারী, কে জানে হয়ত বেজে গেছে টেলিফোনের ঘন্টাটা!
February 28, 2009
Bangladesh On Crisis
February 27, 2009
আমার গল্প .....................
আমি সদ্য কৈশোর পেরুনো এক কন্যা। স্বপ্ন দেখতে আমি খুব ভালবাসি, ভালবাসি কুয়াশার ভোরে শিউলি ফুল কুড়ানো, প্রচন্ড রোদে পিচ ঢালা পথে হেঁটে চলা আর উরন্ত বলাকা। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন আমি উরন্ত বলাকার হব। আকাশ ছেড়ে পারি দেব আকাশের অপর প্রান্তে। আমি মানুষটা শুধু চার ফুট ১০ ইঞ্চি, গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামলা। কৃষ্ণ আমার প্রানের সখা। মেঘে ঢাকা আকাশের নিচে বয়ে চলা উদ্দাম বাতাসে এলোচুল খুলে দৌড়তে আমি খুব ভালবাসি। কখন আপনারা অনেক তারাভরা আকাশের নিচে নদীর বয়ে চলা দেখেছেন? অথবা দেখেছেন বিষন্ন কোন বিকেলে নদীর মাঝে বসে তার ঠিকানাবিহীন বয়ে চলা? আমি দেখেছি, না না আমি অনুভব করেছি। হৃদয় দিয়ে ধারন করেছি বাতাসের গন্ধ, তাদের না বলা কথা, দূর থেকে ভেসে আসা কোন সুরের মুর্ছনা। পাগল ভাবছেন আমাকে? হুম্ম একটু পাগল আছি বটে কিন্তু তারপরেও আমার আশেপাশের মানুষ গুলু আমায় এত্ত ভালবাসে যে আমি অবাক হয়ে যাই। যদি আপনাদের সদয় অনুমতি পাই তবে মাঝে মাঝে এসে আপনাদের আমার গল্প শুনিয়ে যাব। আমার কথায় কথায় আপনাদের নিয়ে যাব হয়ত কখনো অনুভব না করা, হয়ত না ছোঁয়া কোন প্রকৃতির বুকে, না দেখা একটা দেশে, স্বপনের দেশে যেখানে বাস্তবতা বড় নির্মম। কি যাবেন তো আমার সাথে?
ইশ দেখুন তো কান্ড? আমি এখন আমার নামটাই আপনাদের জানাই নি। আমি?? কি নাম দেই বলুন তো? আচ্ছা আমার নাম আজ দিলাম আমার লেখকের এবং তার সবচে ভাললাগা মানুষের প্রিয় নাম অনুসূয়া। ভাবছেন আমার অন্য দুই সখি কোথায়? আরে আমি কি শকুন্তলার সখি নাকি? হুম্ম তবে আমার সখি আছে, চারপাশে অনেক মানুষ আছে, না বলা অনেক কথা আছে, একটা ঠিকানা আছে, একটা ভোরের অপেক্ষা আছে আপনাদের সবার মত। সকালে জেগে উঠা নতুন সুর্য, দিনের পাখিদের ছুঁইয়ে যাওয়া, গোধুলীর আলোর মিষ্টি হাসি, একলা চাঁদ সাথে একলা রাত। অনুমতি পেলে এখন থেকে সব কিছুর নির্জাস আমরা সবাই একত্রে নেব। জানিয়ে দেব আমার না লেখা কোন চিঠির একা ডাকবাক্সে পড়ে থাকার গল্প, একা চিঠি আর একা থাকা সুর, অজান্তে ছুঁইয়ে যাওয়া কারোর চোখের নীল, ইথারে ভেসে আসা কোন ভাল লাগার গল্প। শুধু এখন অপেক্ষা আপনাদের অনুমতির। কি পাব তো? গল্পের নামটা আপনার অনুমতি দিলে পরেই দেব। আমি অপেক্ষায় রইলাম……………..
Subscribe to:
Posts (Atom)