November 13, 2008

আরও টুকরো টুকরো কিছু স্মৃতি.....(৩)





----দিদি ভাই, কই তোমরা? খাইবা না?? আইও তাড়াতাড়ি। সন্ধ্যা হইয়া যাইব একটু পরে। জলদি কর।

অনেকক্ষন ধরে অপেক্ষায় থাকা ২ জোড়া পা ধীর লয়ে খাবার ঘরে প্রবেশ করল। আস্তে আস্তে হাঁটু গেড়ে থালাটার সামনে বসলো। পরন্ত বিকালের আলো টা তখন বৃদ্ধার সারাদিনের ক্লান্ত মুখের উপর খেলা করছে। সামনের থালাতে আছে পোড়া মরিচ, কাঁচা মরিচ আর লবন দিয়ে মাখানো পান্তা ভাত। আর সামনে ওনার প্রানের ২টা হৃদয় যারা অপেক্ষা করছিল পরম আকাক্ষিত এই খাবারটার জন্যে। আর ওই ২টা প্রান হল আমি আর দিদি ভাই। এই খাবারের যে কি স্বাদ!! যদি বুঝানো যেত। আমি চোখ বন্ধ করলে আজও সেই স্বাদ পাই।

গ্রামের কিছু না জানা এই বৃদ্ধার হাত দিয়ে গড়ে উঠেছে একটা বড় পরিবার। যেখানে তার ৫টি মেয়ে আর দু’টি ছেলে বড় হয়েছে, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। তারপরেও এই বয়সে কাজ করার ইচ্ছা এবং শক্তি দুইটাই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় ছেলেটা মায়ের কাজ করা দেখলে খুব বকাবকি করে কিন্তু কাজ করা তো আর থামে না। বরং ছেলে বাড়ি ফিরবার আগেই উনি সব কাজ শেষ করে ফেলেন। কোনো দিন যদি ভুলেও ছেলের চোখের সামনে পড়ে যান তো সেদিন বাড়িতে লঙ্কাকান্ড।

আমি যখনকার কথা বলছি সেটা আজ থেকে ১২ বছর আগের কথা। তবে এখনও কিচ্ছু বদলায়নি আমাদের দিদিমার। এখন আগের মত ভোর ৪ টার সময় ঘুম থেকে উঠে কাজ করতে লেগে যান যদি শরীর ভাল থাকে। ওনার বাড়িতে এক টুকরো ময়লা পাওয়া গেলে আবার ঝাড়ু দেয়া, পরিস্কার করার কাজ শুরু হয়ে যায় এখন। বাঙ্গালির যদি বারমাসে তের পার্বন হয় তো এর আমেজ পাওয়া যেত আমার মামার বাড়িতে। নাড়ু, সন্দেশ, পিঠা, আচার, লুচি আর কত কি!! আমাদেরকে না খাওয়ালে ওনার শান্তি হত না। প্রথমে যে পান্তা ভাতের কথা বললাম ওইটাও সেইরকম কিছু একটা ছিল। আর আমাদের ফেরার সময় আমাদের কে আবার সেগুলো প্যাকেটে ভরে দেয়া কোনো কিছুতেই ভুল হত না। এই হলেন আমার দিদি মা।

দুর্গা পুজা হল আমাদের সব চেয়ে বড় উৎসব। আর পুজার আগে আগে দাদু বাসায় এসে বলে যেতেন যেন পুজোর ষষ্ঠীর দিনেই আমাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় মামার বাড়ি। বাড়িতে গেলেই আগে ছোট মাসীর ধমক,

----অ্যাই, তোরা কেউ হাত মুখ ধোয়ার আগে ঘরে ঢুকবি না।

মাসী হুঙ্কার দেয় আর আমাদের কাজ হল সোজা দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে সেটাকে ভেঙ্গে ফেলা। বাড়ীতে তখন মাটির ঘর লেপার মাতাল করা গন্ধ। অষ্টমী পুজার দিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে এটাই ছিল নিয়ম। ঘটে আশ্রয় নিত দেবী দুর্গা। পাশে সাজান থাকতো নৈবেদ্যের থালা, আর ১০৮ টা ছোট নৈবদ্য। পুজা শেষ হলে পরে আনিল মামা (মায়ের জেঠতুতো ভাই) আর আমি, দিদি, দুর্জয় মিলে আশেপাশের আত্মীয়দের বাড়ি যেতাম প্রসাদ দিতে। ঘোরাঘুরির পর্ব শেষ করে বাড়িতে ফিরে আমাদের খাওয়ার পর্ব শুরু হত। সবচেয়ে মজা হত মনে হয় দশমীর দিনে। আমরা ছোটরা মিলে চড়ুইভাতি করতাম। বড়রা থাকত আমাদের সাথে।

(চলবে)

1 comment:

KAUSHIK BISWAS said...

Wonderful blog :)

Since you made a bangla blog, allow me to say, you can display other nice looking bangla fonts so that you can decorate this blog in a more wonderful way.

Do you know you can do this? Blogspot allows to do that. Don't you want a more elegant look for your blog?