January 31, 2009

শুধুই কি কথোপকথন??:: ২

সেদিন কথা শেষ করে আপন মনে অনেকক্ষন হেসেছিল অনু। কি আজব ব্যাপার! মানুষগুলো আজকাল কি হচ্ছে?? কথা বলতে আসলেই প্রথমে জিজ্ঞেস করে, boyfriend আছে? এটা কোন প্রশ্ন হল? খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে গেল আজ তার। ঘরের ছোট্ট জানালা দিয়ে হালকা বাতাস ঢুকছে, আকাশটা ভীষন রকম লাল, কাকগুলো ডাকতে শুরু করেছে। ছাদে পা দেবার সাথে সাথেই একটা পশলা বাতাস মনটাকে হাওয়ায় উড়িয়ে নিয়ে গেল। সকালের এই সময়টা খুব প্রিয় অনুর।

বেলা বাড়ল এক সময়। ক্লাস শেষে অন্যসব দিনের মত সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে। এই সপ্তাহের শেষে বেড়াতে যাবে সবাই। প্লান হচ্ছে।
--কিরে কই যাবি কিছু বল?
---দূর! পকেট খালি এইবার। ফয়সালের প্রশ্নে সুমিতের উত্তর।
---চল পুরান ঢাকাতে যাওয়া যাক এবার, কাছেই তো। অনুর প্রস্তাব
---এটাতো কাছেই, আর আমরা সবাই মিলে না হয় তোকে স্পন্সর করবো, পরে না হয় একদিন খাওয়াবি, তাহলেই তো হলো।
আতিকের কথা বলা শেষ হতেই ফয়সালের মুখের দিকে তাকিয়ে খুব হেসে দিল সবাই। আর সেটা দেখে সুমিত সহ বাকী সবাই। খুব মজা হয়েছে আজকের ল্যাবে। পর পর দুইটা ঘটনা!

সবাই সার্কিট ঠিক করার কাজে ব্যস্ত, কিন্তু অনু, ফয়সাল, সুমিত আর নুপুরদের সিগনাল আসছে না, এর মধ্যে দুই বার সুমিত আর ফয়সালের ঝগড়া হয়ে গেছে। স্যারের সাথে কথা বলে টুলে বসতে গিয়ে ফয়সাল দুম করে পরে গেলো। :)
একপাশ থেকে সুমিত আর একপাশ থেকে নুপুর ধরে ফেলায় ফয়সালের পুরোটা পরা হল না। ক্লাস এ স্যার শুদ্ধ সবাই হাসতে হাসতে ভিরমি খাবার দশা! সবচেয়ে বেশি হেসেছে মনে হয় অনু কারন কাজটা তারই করা ছিল।ফয়সাল রইল প্রতিশোধের অপেক্ষায়। অবশ্য অপেক্ষা বেশীক্ষন করতে হয়নি। অনু IC লাগাচ্ছে আর তার পিছনে ফয়সাল।

---দেখতো ঠিক আছে কিনা, সুমিতের দিকে তাকাল অনু আর নুপুর।
---আগে দেখ আউটপুট কেমন আসে? পিছন থেকে ফয়সাল।
---আসবে আসবে, ঠিক আসবে। আরে এখানে তো pulse নাই।
--- সমস্যা নাই, পেন্সিল দিয়ে দেয়া যাবে। অনুর উত্তর।
-- কিভাবে?
--- কিভাবে মানে? তুই জীবনেও পেন্সিল দিয়ে pulse দিস নাই মনে হয়। বলেই পিছনে ফিরল অনু আর দেখল স্যার হাসছেন আর ওর দিকে তাকিয়ে আছেন।
চমকে এমনি অপ্রস্তুত অবস্থা অনুর যে বুঝতে আর কিছুই বাকি রইল না। আরেকদফা হাসি শেষ হল।
আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরতে ফিরতে গতকাল রাতের কথা গুলো ঘুরে ফিরে মাথায় এল। মনে মনে নিজেকেই শোধরাল, মেয়ে পটানোর নতুন আইডিয়া!! মন্দ নয়,বলেই আপন মনে হেসে ফেলল অনু। তবে একটা কথায় আটকে রইল একটা কথায়.........

January 28, 2009

শুধুই কি কথোপকথন??:: ১

--কেমন আছো তুমি?
--হুম্ম, ভাল।
--আপনি?
--ভাল।
--কিসে পড় তুমি?
--তড়িৎ প্রকৌশলে।
--আমিও এই বিষয়েরই ছাত্র।
--ও আচ্ছা। কি করেন আপনি?
---আমি এখন জিপিতে জব করি। কোন ইয়ার চলছে তোমার?
--সেকেন্ড ইয়ার। আপনি কি বুয়েটের ছাত্র?
--হুম্ম। একটা প্রশ্ন করি যদি কিছু মনে না করো?
--হুম্ম।
--তুমি তোমার মনের কথা শোন নাকি মস্তিস্কের কথা শোন?
--মস্তিস্কের কথা শুনি। কেন?
--তোমার নিশ্চয়ই কোনো ছেলেবন্ধু নেই, তাই না?
--( রেগে) নেই তো কি হয়েছে?
--নাহ কিছু হয়নি, আমারো না কোনো মেয়ে বন্ধু নেই। কি করি বলত?
--আমি কি জানি কি করবেন......
--তুমি রেগে যাচ্ছ।
--(নিজেকে সামলিয়ে) নাতো!
--শোন, মনের ভিতরটাকে আলোকিত কর। মনের কথা বুঝার চেষ্টা কর।
--ঠিক আছে কিন্তু আপনি আমাকে এসব কথা কেন বলছেন?
--আচ্ছা তোমায় কেউ কখন বলেনি ভালবাসি?
--সেটা আমি আপনাকে কেন বলব?
--খুজঁছ নাকি কাউকে?
--নাহ আমি কেন খুঁজব?? আজব!!
--আমিও না কাউকে খুঁজি না, কেউ চাইলে খুঁজে নেবে কি বল?
--
--তুমি কথা বল। smiley দিবা না আমি পছন্দ করি না।
--ওহ, sorry!
--হুম্ম তাইত উচিত।
--খুঁজ না কিন্তু ঠিক আছে?
--দেখা যাক।
--আজ যাই। পরে দেখা হবে আবার।
--ঠিক আছে।

এখানেই সেদিনের মতো কথা শেষ।

January 27, 2009

ছুটির কড়চা!

অনেকদিন ব্লগে অনুপস্থিতির জন্যে অনেক কিছু মিস করেছি। প্রথমে গত ঈদ এ গল্প লেখা, নির্বাচনের আমেজ, আর নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা, মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্য, ব্লগারস মিট আপ সহ আরও কত কি! যাই হোক এক মাসের ছুটিকে বিদায় দিয়ে এখন আবার পুরানো ব্যস্ত সময়ে ফিরে আসা। আমি কি করেছি এত দিন? অনেক কিছু আবার কিছুই না।

বাসায় গিয়ে দেখি এবারো যথারীতি আমার কিছু বই গায়েব হয়ে গেছে। কোথায় গেল প্রশ্ন করতেই মা র উত্তর আমার এক দাদা এসে নিয়ে গেছেন। নাম শুনেই বুঝলাম বই ফেরত পাবার আশা খুবই কম যদি না আমি কিছু বলি। মনে মনে ফন্দি আটঁতে লাগলাম যক্ষের ধন ফেরত পাবার জন্যে। নতুন গল্পের বই পড়া শুরু করলাম। সাথে কিচু লেখা-লেখির বৃথা চেষ্টা। টুকটাক যাই লিখি পরে দেখা যায় নিজের পছন্দ হচ্ছে না। এডিট করা, কখনো আবার লেখা। গল্পের একটা প্লট মাথায় ঘুরছিল অনেকদিন ধরেই। একদিন রাতের বেলা খাবার সময় মাকে বললাম। গল্পটা শোনালাম। মানে ওই layout টা। শোনানোর বলল, প্লটটা ভাল কিন্তু ঠিকঠাক মত লিখতে হবে। উৎসাহ বেড়ে গেল। কিন্তু ওখান পর্যন্তই।

অনেকদিন পরে বাসায় তাই একদিন এর সঙ্গে নয় ওর সঙ্গে দেখা কর। সবচেয়ে মজা লেগেছিল মামার বাসায় গিয়ে। প্রজ্ঞা আর পৃথা আমার দুই মামাত বোন। ওদের আবার আমার সাথে খুব খাতির। কি করেছে না করেছে সব বলা চাই, আর আমি কি করছি তার ও খবর নেয়া চাই। প্রজ্ঞা স্কুলে ভর্তি হল এবার। কি দেয়া যায় তাই নিয়ে মা আর আমার বিস্তর গবেষনা করতে হল। মা কিছু বলছে আমার পছন্দ হচ্ছে না। আবার আমি কিছু বলছি মার পছন্দ হচ্ছে না মাঝখানে হয়ত বাবা কিচু বলল আর আমাদের দুজনের সেটা পছন্দ না হওয়ায় বাবাকে কড়া করে ধমক। তারপর প্রজ্ঞার জন্যে একটা ঘড়ি কেনা হল। আর সেটা পেয়ে আমার ছোট্ট বোনটা বেজায় খুশি। মামার বাড়িতে গেলাম অনেক দিন পর মনে হয় বছর খানেক পর।

আরো একটা মজার ব্যপার ছিল। আমি এবার নতুন ভোটার। নির্বাচনের দিন সকালে ঘুম ভাংগল মুঠোফোনের বার্তায়। তাতে লেখা “Happy Election Day”. ভোট দিতে গিয়ে দেখলাম মানুষ যেন ঈদ করছে। দুপুরে গেলাম ভোট দিতে ভাবছিলাম হয়ত ফাঁকা থাকবে কিন্তু গিয়ে দেখি মানুষের হাঁট। খুব মজা লাগল!

অনেক দিন পর আমার স্যারদের দেখা করলাম। এক কথায় যেন আবার ফিরে যাওয়া। স্যারদের সাথে দেখা হওয়ার পর কয়েকজন এলেন বাসায়। প্রিয় শিক্ষকদের অনেকদিন পর দেখে মজা লাগছিল খুব। আমার আবার স্যার দের ব্যাপারে খুব খুঁতখঁতে স্বভাব সবসময়। স্যার পছন্দ না হলে আমি স্যার এর কাছে পড়ব না। মা-বাবা আমার এই অভ্যাসটা নিয়ে খুবই বিরক্ত। কোন স্যার যদি আমাকে পড়াতে আসেন তো আমি আগে স্যার এর চেহারা দেখব, স্যার কে দেখে যদি মনে হয় ইনি স্যার এর মত দেখতে তাহলেই আমি পড়ব। আমার কথা হল একজন শিক্ষক কে দেখে যদি আমার শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে না হল তাহলে আমি পড়ব কি করে? HSC তে পড়বার সময় রসায়ন নামক বিষয়টি নিয়ে আমি খুবই ভয়ে ছিলাম। তো মা আমার জন্যে একজন কে বললেন পরীক্ষার আগে একমাস আমাকে জেন একটু দেখিয়ে দেন। স্যার কে দেখে আমার পছন্দ হল না। ব্যস, মাকে বললাম আমি পড়বনা। এটা কোন স্যার হল? মাতো রেগেমেগে সেরকম অবস্থা। মনে আছে স্যার যেদিন শেষ পড়ালেন সেদিন আমাকে বললেন, আচ্ছা তুমি আমাকে teacher হিসেবে মানতে পারছ না কেন? আমি উত্তরে বলেছিলাম, স্যার সেরকম কিছু না। তবে আমার স্যারদের দেখলে শ্রদ্ধা করতে ইচ্চে করবে, জানতে ইচ্ছে করবে, পড়তে ইচ্ছে করবে কেন যেন আপনার কাছে পড়তে বসলে আমি সেরকম কিছু খুজে পাইনা। কিন্তু আপনি ভাল পড়ান, আপনি যা পড়িয়েছেন অনেক ভাল পড়িয়েছেন। স্যার অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে, তারপর বললেন, তোমাকে পড়াতে পারলে ভাল লাগত কারন তুমি জানতে চাও। যাবার সময় মাকে বলে গিয়েছিলেন আমার পড়াশুনার দিকে মা যেন খেয়াল রাখেন।

এই যে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি কিন্তু আমার এই স্বভাব যায়নি। কোন স্যারকে ভাল না লাগলে আগের মত না হলেও আমি বন্ধুদের কাছে বলে ফেলি। তবে এই স্বভাবের জন্যে কিন্তু কখন ঠকিনি এখন পর্যন্ত, বরং লাভ হয়েছে। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় যত শিক্ষকের কাছে পড়েছি তাদের good book এ নাম লিখিয়েছি। মাঝে মাঝে আমার সহপাঠীরা খুব অবাক হয় যখন দেখে কয়েক সেমিস্টার আগে ক্লাস করা স্যাররা আমাকে দেখে কেমন আছো জিজ্ঞেস করেন, নাম জানেন। আমার ডাক্তারী পড়ুয়া বন্ধু রুবী বলে, আমাদের চেহারা মনে হয় এমন তাই এত খারাপ অবস্থা! ঠিক যেন নজরুলের গান, “আমারে দেব না ভুলিতে”।

ছুটি শেষ, আবার ব্যস্ত দিনের শুরু। দেখতে দেখতে একটা সপ্তাহ কেটে গেল। আরো একটা নতুন বছর, নতুন প্রত্যাশা। দিন বদলের অপেক্ষায় আমরা সবাই।