March 01, 2009

এটাকে কি শুরু বলা যায়?



হাল্কা রোদের মাঝে ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। বাতাসটা এত মৃদু যে, রোদের তাপটা গায়ে লাগতে পারছে না। রাস্তাটাও খুব নীরব, আশেপাশে মানুষজন খুব কম, যারা আছে তারাও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। এক পশলা ধুলোবিহীন বাতাস এসে লাগল মুখে, পাশাপাশি হাঁটছি আমরা দুজন। এর আগেও আমরা হেঁটেছি, কথা বলতে বলতে হাঁটা। একটা পলাশের গাছের দিকে তাকিয়ে কিছুটা অন্যমনস্ক আমার লেখিকা।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি অত ভাবছ বলত? পলাশের দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছ যে?
বসন্ত এসে গেছে প্রকৃতিতে, ওই যে দেখ! সত্যি ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক বসন্ত এসে গেছে। একটু হেসেই বলল, ভাবছিলাম তোমার কথা, তোমার গল্পের কথা। শুরুটা করব কিভাবে?
আমার জোরে হাসি শুনেই বলল, আরে বাবা রাস্তায় দাড়িয়ে আছ তাও কি মনে করিয়ে দিতে হবে নাকি? ? খুবতো বললে গল্প শোনাবে, এবার শুরুটাও শুরু করে দাওতো। হাল্কা অভিমানি সুর।
না না তা হবে না। আচ্ছা তোমার শুরু কোথা থেকে?
আমার জন্ম থেকে। কিন্তু আমি সেভাবে শুরু করতে চাই না। তোমার পল্পটা একটু অন্যভাবে শুরু হোক, একটু আলাদা ভাবে। সবার চেয়ে আলাদা তুমি। আচ্ছা তোমার সাথে আমার প্রথম পরিচয়টা কবে হয়েছিল বলতে পার?
হুম্ম খুব আছে। আমি মাথা নিচু করে বলি।
তখন আমি মনে হয় স্কুলে পড়ি। আমার লেখিকা বলে।
না না। স্কুলে না ভুল বললে। তোমার এস. এস. সি. পরীক্ষার পরে। স্কুলে আমি তোমার সাথে পরিচয় হতে চেয়েও আমি পারিনি। তুমি আমার দিকে কখনো ফিরেও তাকাতে না। খুব কষ্ট হতো তখন। তোমার উপযুক্ত হয়ে উঠতে কত না চেষ্টা করেছি আমি, একটানে বলে গভীর নিশ্বাঃস নেই আমি আর তুমি যে বললে পরিচয়ের কথা সেটা এর মধ্যে হয়ে গেছে। এবারতো শুরু করার পালা গল্প।
একটু ফাঁকা একটা জায়গা দেখে বসে পড়ি আমরা দুজনে।
একটা সময় ভাবতাম আমাকে দিয়ে বুঝিবা কিছুই হবে না। যখন পৃথিবীতে আসি তখন থেকেই নিজেকে সব সময় অনাহুত হিসেবেই পেয়ে এসেছি, দেখে এসেছি। তোমাকে দেখে আমি আবার আমাকে খুঁজে পেয়েছিলাম। স্বর্ণলতার মত তোমাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে উঠার চেষ্টা করতে শুরু করলাম। একটা বইয়ের দোকানে তুমি বই খুঁজছিলে। আমি একটু সুযোগ পেয়ে তোমার কাছে গিয়ে তোমায় বললাম, তিন গোয়েন্দার বই পড়তে পার। তূমি আমার দিকে তাকিয়ে বললে, তোমার যা ভাল লাগবে সেটা আমারও যে ভাল লাগতে হবে তার কোন মানে নেই। আমার রবি ঠাকুরের “ডাকঘর” ভাল লেগেছে আমি ওটাই নেব। তুমি চাইলে এটা কিনতে পার। আমি সেদিন কোন বই কিনিনি। বলেছিলাম, তোমার একটু সময় হবে? যদি কিছু মনে না কর তো একটু কথা বলব। তুমি সেদিন না বলনি আর তাই আমি আজ তোমার সাথে। তারপরে কিছুক্ষনের নীরবতা।
একটু পরেই আবার, তুমি অনেককিছুই জান না। তোমার সাথে আমার কথা বলার যে কি আগ্রহ ছিল বলে বুঝাতে পারবো না। ইচ্ছে ছিল তোমার সাথে আমি বন্ধুত্ব করব। তুমি আমাকে যেন চিনতেই না! সেদিন কথা বলতে বলতে বুঝেছিলাম আকাশের মত তুমি, নদীর জল যেমন করে বয়ে চলে ঠিক তেমনি তুমিও বয়ে চল আর আমাকেও তুমি ভাসিয়ে নিয়ে গেছো তোমার স্রোতে। গাছে ফুল ফোটে আবার ঝরেও যায়। তুমিও ঠিক ওই ফুলটার মত, কিন্তু তুমি ঝরে গেলেও মনে একটা গভীর ছাপ রেখে যাও এবং তুমি আমাকেই এটা শিখিয়ে দিয়েছো এত দিনে। মনের কথা গুলো কাউকে বলার সুঝোগ হয়ে উঠেনি। ভাবতাম কি করে বলতে হয়। কিন্তু ওই ভাবনাতেই আমার সারা, মুখ ফুটে বলা হয়নি।
আবার আমরা হাটঁতে শুরু করেছি আমরা। মাথার উপর দিয়ে একটা প্লেন ঊড়ে গেল। তোমার মনে আছে আমরা দুজনেই ভাবেছিলাম ওই আকাশে উড়াল দেব। আকাশে নিজেদের ঘর বানাবো। তুমি স্বপ্ন দেখতে আর আমাকেও দেখাতে। ধানের খেতের মাঝের চিকন আইল ধরে অনেকটা পথ হেটেছি আর অনুভব করেছি প্রকৃতি কথা, সুর। কখন যদি ভুলে আমাদের আড়ি হয়ে যেত তুমি আথবা আমি যে কেউ গিয়ে আগে কথা বলতাম। হা হা হা হা হা।
আড়ি আড়ি/ বন্ধু তোমার সাথে আড়ি আড়ি/ বড্ড তোমার তাড়াতাড়ি/ তুমি থাক না অবেলায়/ আমি একা জানালায়, সন্ধের আগে সুর্যের মত পশ্চিমে দাও পাড়ি। বিড়বিড়ি করে গেয়ে উঠি দুজনে।
বন্ধুত্ব টা আসলেই আমাদের ওরকম। পাশাপাশি হেটে চলা, ঠিক যেন ছায়াটি। আচ্ছা অনেকটা তো হল আমার কথা বলা। এবার বলতো তোমার গল্প, লেখিকা শুধায়।
আমি বলি বন্ধু তুমি যার নাম দিয়েছ অনুসুয়া তার গল্পটাতো এভাবেই শুরু করতে হবে। রঙ জিনিসটা চিনতে আমার অনেক সময় লেগেছিল। গাছের নিচে বসে অলস সময় কাটানোটা আমার জন্যে ক্লান্তির কাজ ছিল। পথ ছিল, রথ ছিল, চলে যাওয়া ছিল কিন্তু কিভাবে পথিক হতে হয় জানা ছিল না। পথে হাজারো মুখ ছিল তার আড়ালে ছিল হাজারো সুখ-দুঃখের সাতকাহন। কিন্তু এর মাঝে চেনা স্পর্শ গুলোকে চিনতে আমার সময় লেগেছিল। হাসির আড়ালেও যে একটা নিস্তব্ধতা থাকতে পারে বুঝিনি অথবা বুঝতে চাইনি। পাথর হয়ে যেতে যেতে আবার ফিরে এসেছি। জোনাকির আলোতে মনকে হারিয়ে ফেলি, আবছায়া জানালার কাঁচে আজ আমি রূপকথার ছবি আকিঁ। ছলছল হাওয়ায় খুঁজে ফিরি পুরানো আঙ্গুলের ছোঁয়া। কি পারবেতো এবার আমার গল্পের শুরুটা করতে?
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হারিয়ে যাই আমরা, হয়ত সেই জমকালো চাঁদের দেশে। মন হয়ে যায় ফেরারী, কে জানে হয়ত বেজে গেছে টেলিফোনের ঘন্টাটা!

No comments: