March 01, 2009

শুরুতো হলো, এবার?


চারদিকে থই থই জল, এর মাঝে একজন প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছেন। পাশে শুধু ডাক্তার আর একজন নার্স। স্বামী মানুষটি বাইরে অপেক্ষা করছেন। বাইরে বন্যার জল, আর থেমে থেমে বৃষ্টি। এর মধ্যেও বাড়িতে খবর পাঠানো হয়েছে। প্রসব বেদনায় কাতরানো মহিলাটি নিজে একজন ডাক্তার, মফস্বলে তার পোষ্টিং, যেখানে তার শ্বশুর বাড়ী। বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি খবর পেলেন ছেলে লোক পাঠিয়েছে যাবার জন্যে। ভদ্র মহিলাটি না গিয়ে লোক মারফরত খবর পাঠালেন, যদি ছেলে হয় তবেই তিনি দেখতে যাবেন নচেৎ নয়।
সংবাদ বাহক যখন খবরটি মহিলাটির স্বামীর কাছে পৌঁছে দিচ্ছিল তখন সদ্য মা হতে যাওয়া মানুষটাও কথাটা শুনতে পায়। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেলে, মেয়ে হোক অথবা ছেলে তাকে মানুষের মত মানুষ করে তুলবে সে। মেয়ে হলে তাকে পৌছে দেবার চেষ্টা করবে সফলতার চুড়ায়। যেন আজকে যে মানুষ গুলু তার অনাগত সন্তান কে এত কথা বলছে তারাই কাল তাকে নিয়ে গর্ব করবে, তার পরিচয়ে পরিচিত হবে। প্রতীক্ষার অবশেষে ছোট্ট একটা প্রান চিৎকার করে জানিয়ে দিল, আমি এসেছি। তার স্বামীর নির্দেশে লোক লজ্জার ভয়ে মেয়েটার শ্বাশুড়ি শেষ পর্যন্ত এসেছিলেন, হাজার হোক বংশের প্রথম সন্তান বলে কথা। কিন্তু ঐ যে মেয়ে, সেটা ভুলে যেতে না পারলেন শ্বাশুড়ি, না পারলেন সদ্য পৃথিবীতে আসা মেয়েটার বাবা। আজকে এই আমি, অনুসুয়া সেদিনের সেই মেয়ে, অনাহুত কিন্তু মায়ের স্বপ্নে লালিত।
মেয়েরা নাকি বাবা ঘেঁষা হয়। আমি তার উলটো। আমি মা নেওটা। বাবা অনেক চেষ্টা করতেন তার এই অনাহুত মেয়েটার প্রতি বিরাগ ভাব না দেখাতে কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোথাও না কোথাও ধরা পড়ে যেতেন। বড় হতে হতে যেন মেনেই নিয়েছিলাম এই “অনাহুত” শব্দটি। আমার মেরুদন্ডটাকে শক্ত আর খাড়া রাখার জন্যে ওই একটা শব্দই যেন যথেষ্ট! কিন্তু মায়ের স্বপ্ন দেখা মন আমাকে দিয়েছে অন্যরকম হবার প্রেরনা, একটু আলাদা। তারপরেও আজকাল মনে হয় আমি খুব সাধারন। আমার মধ্যে কোন বিশেষ বলে কিছু নেই। আমি খুঁজে চলেছি সোলমেট, কিন্তু তারপরেও যখন খুব কাছেও বন্ধুরা বলে মানুষটা তো ৪ ফূটি কি দরকার এত বড় স্বপ্ন দেখার? একটু আস্তে পায়ের নীচে দেখ মাটি আছে কিনা এরকম হাজারো কথা।
কিন্তু আমি জানি, বিশ্বাস করি, আমার পায়ের নীচে মাটি আছে। আকাশে আমার মনটা অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলেও আমি জানি আমার পা দুটি কখনো কাদা মাটিতে কখনো শক্ত-তপ্ত মাটিতে আছে। মনটা কে এখন এতটাই শক্ত করে ফেলেছি যে আজ আর চেনা শোনা মুখ, প্রিয় মানুষ গুলো, কাছের মানুষ গুলো যখন আমার মনের আকাশে মেঘ জমিয়ে দেয় তখন আর আগের মত মন খারাপ হয় না। ছোট ছোট নুড়ি পাথরের মত দিন গুলো পার হয়ে যায়। আমার কাজে দিন গুলো যেন আরো রঙ্গিন হয়ে উঠে আর আমার প্রিয় মানুষ গুলোর মুখগুলো ভরে উঠে অদ্ভুত এক আলোয়। এ কি আমি কখনো কিনতে পারব? না এমনি এমনি দেখতে পাব! এগুলো আমার কাছে অমুল্য। রঙ পেন্সিল, জাহাজের ডাক, জমকালো রাতের তারারা যেন আমার ফেরারি মনকে স্বপ্নের দেশে নিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশী আর কি চাই?
ভাবছিলাম আমার গল্প বলব আপনাদের সবাইকে। কিন্তু দেখলেন তো শুরুটা কি রকম এলোমেলো হয়ে গেল। গল্পের শুরু করব কিভাবে তাই বলতে গিয়ে একগাদা অগোছালো কথা বলতে হল। ভীষন স্বপ্নবাজ আমি, আমার লেখিকা বন্ধুটি শিখিয়ে দিয়েছিল একদিন কি করে স্বপ্ন দেখতে হয়! আর বাস্তব পরিস্থিতি শিখিয়ে দিয়েছিল শত বাধা, কষ্ট সত্বেও কি করে স্বপ্নে বাঁচতে হয়, কি করে বেঁচে থাকতে হয়। জানি না আমার গল্প আপনাদের ভাল লাগবে কিনা। তারপরেও বলে যাওয়া। টুকরো টুকরো ঘটনা আর কল্পনার পাখনা জানি না আপনাদের আমার সাথে উড়িয়ে নিতে পারবে কিনা। আজ বিদায় নিচ্ছি। হয়ত আবার দেখা হবে।

No comments: