May 26, 2009

একটা প্রশ্ন আর......

ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর। আর সেই কন্ঠস্বরে কথা বলতে চাওয়ার কি অসম্ভব ব্যাকুলতা!! আমি অবাক হয়ে যাই। কেউ কারোর সাথে কথা বলতে এতটা ব্যাকুল থাকতে পারে?? নববর্ষের এই আনন্দের মাঝেও প্রিয় মানুষ গুলোকে বিশেষ দিনে কাছে না পাবার কষ্টগুলো আমাকে ছুঁইয়ে যায়। কি অদ্ভুত আমাদের সম্পর্ক গুলো। কাছে থেকেও অপরিচিত আর দূরে থেকেও কত দিনের যেন চেনা!

- কিংস এর পাশে বসে না না দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার কথা ভাবছিলাম আর ফোন করছিলাম। কিন্তু কোন এক কারনে তোমার ফোন এ লাইন পাচ্ছিলাম না। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল তোমার সাথে কথা বলি। কিছু প্রশ্ন এসে মনে খোঁচাখুঁচি করছিল। ভাবছিলাম তখনি করি কিন্তু করা আর হয়ে উঠে নি।
- হুম্ম বল তোমার প্রশ্ন দেখি যদি উত্তর আমার জানা আছে কিনা। যদি থাকে তো উত্তর পাবে!
- আমি জানি তোমার কাছে আমার প্রশ্নের উত্তর মিলবে। আমি অনেকক্ষন কিংসের পাশে দাঁড়িয়ে বয়ে চলা জলের দিকে তাকিয়েছিলাম। আর ভাবছিলাম, জলকে আমরা এত ভালবাসি কেন? কেন জল ছাড়া আমাদের চলে না?? বলতে পার? আমাকে জল, নদী, সমুদ্রগুলো এতটানে জান?? কেন টানে এত বলো দেখি। আমি কেন এর উত্তর খুঁজে পাই না?
- জলের একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো, জল শুধু বয়েই চলে। বয়ে চলাই তার চিরায়ত নিয়ম। কখনো ফিরে তাকায় না। যত বাধাই আসুক না কেন জল তার আপন গতিতে চলতে থাকে। উঁচু নিচু সব জায়গাতেই স্রোত একি ভাবে চলে। আমরা সেটা পারি না। আমরা দুঃখ কষ্টে ভেঙ্গে পড়ি। কিন্তু জল, সে কখনো ভেঙ্গে পড়ে না। নুড়ি, পাথর কত কিছু জলের চলার পথে থাকে। কিন্তু সে কারোর বাধা মানে না। নদীর জলের কথাই ভাব, কি সুন্দর বয়ে চলে। আর এই যাবার পথে দুকুলে কত কি না দিয়ে যায়। কখনো প্রাচুর্য আর কখনো দরিদ্র করে রেখে যায়। কিন্তু যেটা করে সেটা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই জলের। সমুদ্র কত বিশাল দেখ!! তুমি, আমি অথবা আমরা কি কখনো পারব এতটা বিশাল হতে?? কত কিছুকে জল তার নিজের মধ্যে ধারন করেছে, কত মুল্যবান জিনিস, কত জীবন। জল কি তাদের দিক থেকে একবারের জন্যেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? নেয়নি, বরং পরম মমতায় নিজের মাঝে আগলে রেখেছে।
- আর?
- আর?? আর আমাদের চোখের জলের কথা বললে বলা যায়। কষ্ট পেলে আমরা কাঁদি। আর আমাদের কষ্ট গুলো জল হয়ে আমাদের কিছুটা হাল্কা করে দিয়ে যায়। এই যে পৃথিবীতে আমরা আছি, ভেবে দেখ আমরা কি কেউ কারোর জন্যে থেমে আছি? আজকে কেউ মরে গেলে, কালকেই আমাদের মনে তার কথা ফিকে হয়ে আসে সে যত আপনি হোক। জল ও তেমন, কারোর জন্যে থেমে থাকে না। বৃষ্টি তো তোমার খুব ভাল লাগে। বৃষ্টির আগে আর পরে কখনো প্রকৃতিটাকে দেখেছো?
- কেন বলতো?
- গাছে লতায় পাতায় বৃষ্টি হবার আগে অনেক ধুলোবালি জমে থাকে। শুধু গাছেই না, পুরো বায়ুমন্ডল কি রকম উত্তপ্ত থাকে দেখেছো? আর বৃষ্টি হবার পরে সব কিছু অনেক পরিষ্কার হয়ে যায়। যেন নতুন রূপে সাজে প্রকৃতি। জল যখন উপর থেকে পরে তখন সোজা নিচে চলে যায় আর যাবার পথে সব কিছুকে শুদ্ধ করে দিয়ে যায়। অই গল্পটা পড়েছো, যেখানে গঙ্গাতে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যায় বলা আছে। ওই যে শিব আর পার্বতী মিলে মানুষকে পরীক্ষা করতে আসে।
- হুম মনে আছে। মনে বিশ্বাস থাকলে পাপ দূর হয়ে যায়, গঙ্গার জলটাও সেই বিশ্বাস এরই একটা অংশ।
- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। আর এই জন্যেই মনে হয় জলকে আমরা এত ভালবাসে। যে কিনা নিজে নিম্নগামী হয়েও অন্যদেরকে পবিত্র করে দিয়ে যায়। বলে যায় নিচে যাওয়াটা অনেক সহজ কিন্তু উপরে মাথা উঁচু করে থাকা অনেক কষ্টের। মাটিতে পা রেখেই তবে উপরে তাকাতে হয়। এবার তুমি ভেবে দেখ কেন তোমার সমুদ্র, জল, নদী এত টানে।
- বুঝতে পেরেছি আমি। দেখেছো আমি বলেছিলাম তোমার কাছেই আমার উত্তর আছে। তুমি কি সুন্দর উত্তর দিয়ে দিলে আর আমিও পেয়ে গেলাম।

আর অনেক কথার পরে, আমাদের কথা শেষ হল। ভাবছেন কার সাথে কথা বলেছি? এ আমার খুব ভাল একটা বন্ধু, যে কিনা সব সময় ভাবে আমার কাছে তার সব কথার উত্তর আছে। জানি না ঠিক ঠিক উত্তর দিতে পেরেছি কিনা। তবে চেষ্টা করেছি নিজের মত করে বুঝিয়ে দিতে। কারন মাঝে মাঝে আমাকেও ওর করা এই প্রশ্নটি খুব ভাবায়।

No comments: