May 26, 2009

বলা হয়নি!

**
ওর গায়ের গন্ধটা সব সময় শাওনের ভীষন ভাল লাগে। কাছে গেলেই কি মিষ্টি গন্ধ!! এই গন্ধের জন্যেই কিনা সব সময় অর গায়ে লেপ্টে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেই ইচ্ছে পর্যন্তই….. ভাবে কবে কি বলে ফেলবে, আর তাই কাছে যেতে হয় সাবধানে, সবার অগোচরে।

নীল রঙের শাড়ীতে অসম্ভব সুন্দর দেখায় তাকে। তাই যখনি শাড়ী কিনতে যাবে শাওন তখনি নজর চলে যাবে নীল রঙের শাড়ীর দিকে। একবার হয়েছে কি, পূজোর ঠিক আগে আগে সে কিছু টাকা দিল শাওনকে। টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, নাও টাকাটা দিয়ে তুমি তোমার নিজের জন্যে, আমার জন্যে আর বাসার সবাই জন্যে কিছু না কিছু কিনা নিও। কথা মত সময় করে শাওন শো-রুম গুলো ঘুরতে লাগল। শাড়ীর দোকানে ঢুকেই দুটো শাড়ী পছন্দ হয়ে গেল। টাকা গুনে দেখল ওর জন্যে যদি শাড়ীটা কিনে ফেলে তো নিজের জন্যে আর কিছুই কেনা হবে না। ধুর এত্ত কিছু ভাবার সময় আছে নাকি? নিজের জন্যে না হয় কিছুই কিনলাম না, ওর হাসি মাখা মুখটা তো দেখতে পাব। সেবার বাসায় ফিরে ওর কাছে খুব বকা শুনতে হয়েছিল কিন্তু শাড়ি গুলো হাতে নিয়ে ওর হাসি মাখা মুখটা যেন আর কিছুই মনে রাখতে দিল না। অন্যের জন্যে বেঁচে থাকাটাই যেন সার্থক হয়ে যায়।

**
রাত ৩টা বাজে। হঠাৎ মাথায় একটা হাতের স্পর্শ। নরম হাতের এই ছোঁয়াটা শাওনের খুব পরিচিত। কাজ করতে করতে টেবিলের উপর মাথাটা রেখেই ঘুমিয়ে পরেছিল। হাতের স্পর্শে ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলেই সেই মায়াভরা মুখ। দু হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে আহ্লাদি কন্ঠে শাওন বলল, কি ব্যাপার এত রাতে উঠে গেলে যে? ঘুম আসছে না? ও বলল, আমার ঘুম ঠিক হয়েছে কিন্তু তুমি এভাবে ঘুমাচ্ছ কেন? শাওন বলল, ইস জান না তো কালকের মধ্যেই কাজ গুলো জমা দিতে হবে, কাজ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল ছিল না। কথা শেষ হতেই ও উঠে চলে গেল। আবার একটু পড়েই ফিরে এল এককাপ গরম কফি নিয়ে।
নাও কফি খেয়ে কাজ শেষ করো, ওর গলায় অর্ডার দেয়ার স্বর। শাওন চোরা মুখ করে ওর হাতটা ধরে কাছে টেনে উঠে দাড়াল, আচ্ছা ঠিক আছে কাজ শেষ করছি। কিন্তু তুমি কেমন করে বুঝো আমার কখন কি লাগবে সেটা বল? ও তখন বলে, সময় হোক আগে তারপরে তুমি নিজেই একদিন বুঝবে। তবে একটা কথা মনে রেখ তুমি আমার স্বপ্ন, আর সেতা যেন কোন ভাবেই ভেঙ্গে না যায়। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ও বলল। শাওনের মাঝ থেকে চুপিসারে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কিন্তু বুঝতে দিল না কিন্তু মনে মনে বলল, সে কি আর আমি জানি না? সে জন্যেই তো কাজ করে যাচ্ছি।
পরের দিন বিকালে অফিস থেকে ফিরে দরজায় বেল বাজাতেই ও এসে খুলে দিল খুব তাড়াতাড়ি। মনে হচ্ছিল যেন শাওনের আসার অপেক্ষায় ছিল ও। কি ব্যাপার বলো তো, এত খুশির কি হল?, শাওন ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন ছুঁড়ল। তুমি ঘরে যাও আমি আসছি বলেই চলে গেল ও। শাওন একটু অবাক হল নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগটা রেখে খাটে বসল, তখন ও ঘরে এল একটা খাম নিয়ে। খামটা হাতে নিয়ে দেখল, খামেয় গায়ে নিজের নাম লেখা, আর চিঠিটা এসেছে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। খাম খোলার আগেই ও বলল, তোমার MS করার স্কলারশিপ তুমি পেয়ে গেছ, তাহলে এবার চাকরি ছেড়ে যাবার প্রস্তুতি শুরু করো। ওকে আমি এত খুশি এর আগে দেখেছি কিনা আমার মনে পড়ে না।

**
টেলিফোনের রিংটা বেজেই চলছে। ঘরের মেঝেতে বসে ছিল শাওন। হাত বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করার আগেই লাইন কেটে যায়। কিরে শাওন, এভাবে আর কতক্ষন বসে থাকবি যেতে হবে তো আয় শেষ বারের মত একটি বার দেখে যা, বীনা মাসি বলল। শাওন উঠে দাঁড়ায় বলে, যেতে তো দিতেই হবে মাসি, আমাকে একা ফেলে কেমন করে চলে গেল বলতে পার? একবারের জন্যেও ও ভাবলো না? মাসির চোখে জল। টলমল পায়ে বসার ঘরে এল সে। ঘরের ঠিক মাঝে ও শুয়ে আছে, মাথার পাশে ধুপকাঠি জ্বলছে, মেঝ মাসি গীতা পড়ছেন। পাশে বসে শাওন বসল আর মনে মনে বলল, দেখ একবার তোমার স্বপ্ন আমি পুরন করছি এবং করে যাব। শুধু দেখার জন্যে তুমি রইলে না। অনেকক্ষন ধরে শাওন ওর দিকে তাকিয়ে রইল, হঠাৎ চোখের কোল বেয়ে নেমে এল এক ফোঁটা জল, তোমাকে কখনো বলা হয়নি ভালবাসি। আজ বলছি যদি পার শুনে নাও, মা তোমাকে আমি অনেক অনেক অনেক ভালবাসি। এভাবে তোমার মেয়েকে একা ফেলে কেন চলে গেলে? কেন? বিদায়ক্ষন চলে এল, আর শাওনের বুক থেকে চুপিসারে বের হয়ে এল, মা!

No comments: