November 13, 2008
কোনো এক শীতের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি................(২)
আমার মামার বাড়িটা কুমিল্লা শহরের এক প্রান্তে। রেল লাইন পার হয়ে যেতে হয়। বাড়িতে ঢুকবার জন্যে দুইটা রাস্তা। একটা উত্তর পাশে, অন্যটা দক্ষিন পাশে। দক্ষিন পাশের রাস্তাটাই বেশি ব্যবহার করা হয় আজকাল। এই রাস্তাটার দুই পাশে দুইটা পুকুর আর একটা শিমুল গাছ। এর মধ্যে উত্তর পাশের পুকুরটা এখন আর নেই, দক্ষিন পাশেরটা আর কয়েকদিন পরে হয়ত থাকবে না।দক্ষিনএর রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পরে মাটির ঘর আর বিশাল উঠোন। উঠোনের পুর্ব পাশে বড় মামার ঘর আর পশ্চিম পাআহে দাদুর ঘর। দুতি ঘরের মাঝ খানে খাবার ঘর। খাবার ঘর পেরিয়ে ভিতরে ছোট্ট একটা ঊঠোন ওখানে খরের তৈরি রান্নাঘর। খাবার ঘরের দরজার বাইরে একটু দূরে আক্তা শিউলি ফুলের গাছ। সব মিলিয়ে দারুন সুন্দর ছিল আমার মামার বাড়ি, ছুটি কাটাবার জন্যে উপযুক্ত জায়গা।
তখন জানুয়ারী/ডিসেম্বর মাস চলছে হয়ত। আমি আর দিদি ভাই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি মামার বাড়িতে। প্রচন্ড শীত পরছিল। এর মধ্যে সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে পরতে বস্তে হত। লেপের নিচে দুই বোন মিলে পরতে বসে যেতাম। রোদের তাপ একটু বারলে পর দুই জন মিলে ঊঠনের গিয়ে বসতাম। সকালের খাবার হিসেবে উঠোনে আসত দিদিমার হাতের তৈরি করা পিঠা আর খেজুরের রস। কখনো-সখনো এক কাপ চা জুটত কপালে। রোদের মাঝে বসে সকালের পড়া শেষ করে গিয়ে দাদুর পাশে জায়গা নিতাম। দাদু বসে বসে দলিল লিখতেন তখন আর চা খেতেন। ওনার হাতের লেখা ছিল অনেক বেশি সুন্দর। মনে আছে তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। হাতের লেখা লিখবার সময় দাদু আমার খাতা কেড়ে নিয়ে বলেছিলেন, কি লিখিস সব কাকের ঠাৎ। মামনিকে খুব করে বকেছিল এই জন্যে। আজকে আমার হাতের লেখা আমি মনে করি বেশ ভাল :P। তো দাদু পাশে বসে লেখা দেখা আর দাদুর সাথে বসে গুটুর গুটুর গল্প করাছিল আমাদের কাজ। বেলা ১২টা বাজতেই আমাদের স্নান শেষ। তারপর ঘুম। ঘুম থেকে উঠতাম ঢেকির শব্দে। আমার দিদিমা পিঠা বানাবার জন্যে চালের গুড়ো বানাচ্ছেন। ঢেকির শব্দটা এক্তা অদ্ভুত লয়ে চলত। ভারি দারুন লাগত শুনতে। এমনি করেই এক একটা শীতের দিন পার হত তখন।
এই শীতের সময়েই হয় স্বরস্বতী পুজা। পুজাতে উপহার পাওয়াটা ছিল আমাদের প্রধান আকর্ষন। শেফালি ফুলের গন্ধ, নতুন পোশাক, সকালে উঠে ঠান্ডার মাঝে স্নান করা, তারপর সবাই মিলে নৈবেদ্য সাজানো, পুজার প্রসাদ, ধুপের গন্ধ যেন অন্যরকম এক্তা ব্যাপার স্যাপার। পুজার আগে আমরা একজন আর একজনের নতুন জামা দেখতাম না। আসলে দেখতে দিতাম না পাছে পুরান হয়ে যায়। তবে এই জায়গায় দুর্জয় তার দুষ্টামি টা বজায় রাখত। আমার ড্র্ব্বয়ার খুলে কাখন কারপ বের করে আনা যায় সেই মতলবে থাকত। উপোস করে অঞ্জলি দিয়ে প্রনাম করবার পর মিলত আমাদের প্রসাদ। আর সেই প্রসাদের স্বাদ?? ভেবে নিন কেমন হতে পারে। কারন আমাদের কাছে সেটা ছিল অমৃত। পুজার সারাটা দিনই কাটতো দই, লুচি, শব্জি আর অনেক কিছু খেয়ে।
পুজার ছুটি শেষ আমরা চলে আসতাম বাসায়। কিন্তু অপেক্ষায় থাকতাম পহেলা বৈশাখের জন্য। কারন তখন আবার মামার বাড়ি যাব, আবার মজা হবে। 8-|
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
Post a Comment