February 27, 2009

ব্যস্ত দিনের কথাঃ৩

আজকাল বড্ড বেশী ঘুম কাতুরে হয়ে গেছি আমি। খালি ঘুমাতে ইচ্ছে করে। সকালে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যে একবার মামনি, একবার বাবা, একবার দাদা ফোন করে। আমি এই উঠছি বলে আবার ঘুমিয়ে পরি। আশার কথা যে এই সেমিস্টারে আমার সকালে ক্লাস মাত্র একদিন, রবিবার। আর ছুটি?? বলব না। কারন শুনলে আপনারা জেলাস ফিল করবেন। তবে ছুটির দিন গুলোতেও আমি ব্যস্ত থাকি কোন না কোন কাজে।
আজকে বসে বসে লিস্ট করছিলাম কি কি এখন ব্লগার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করিনি। লিস্ত এর মধ্যে প্রথমে ছিল স্বরস্বতি পুজা, তারপরে বসন্ত আর তারপরে ভালবাসা দিবস। তারপরে যেটা ভাবলাম সেটা হল কে কি লিখেছেন পড়া হয়নি। এক সপ্তাহ কম কথা! আর আমি যা আলসেমি শুরু করেছি কোনটা রেখে কোনটা পড়ি?
আজকে সারাদিন বসে বসে খালি গান শুনেছি। আমার সব সময়ের সঙ্গী মিউজিক সেটা গান হোক অথবা ইন্সট্রুমেন্টাল, বই আর মাঝে মাঝে আমার 6B পেন্সিল। যেটা বলছিলাম একটার পর একটা গান শুনেই চলেছি। বিকাল পর্যন্ত শুনেছি রবীন্দ্রনাথের গান তাও আমার প্রিয় শিল্পী বন্যা দি’র কন্ঠে। আজকে আমার সংগ্রহে থাকা প্রায় অনেক গুলো গান শুনেছি। গান শুনতে শুনতে ভাবছিলাম যে পড়া নিয়ে বসবো।কিন্তু কিসের কি! মডার্ন ফিজিক্সের বই বাদ দিয়ে নিয়ে বসলাম উপন্যাসের বই নিয়ে। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের “অন্য বসন্ত”র প্রথম গল্পটা শেষ করলাম। আমার পড়ার টেবিলে এখন ৩টা বই পড়ে আছে, আর রুমমেট দেরও কিছু বই আছে। অনেক বই জমে গেছে তার উপরে বই মেলা থেকে কেনা বইতো আছেই! আমার রূমমেট গুলা মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত করলেও আমাদের একটা দিকে খুব মিল আর সেটা হল বই পড়া। একদিন আমি কি যেন কাজ করছিলাম, হঠাৎ শুনি কে যেন কাঁদছে। অনেক রাত তখন, প্রথমে পাত্তা দেইনি কিন্তু একটু পরেই শব্দটা একটু বাড়তেই পিছনে ফিরে দেখি আমার এক রুমমেট কাঁদছে! কি রে কি হয়েছে? চিন্তিত আমরা অন্য দুজনের প্রশ্ন। তখন দেখি সে বই পড়ছে আর কাঁদছে। বইটা সম্ভবত ছিল আনিসুল হকের “মা”। এমনি অনেক ঘটনা আছে আমার রুমে! এবার যা নিয়ে কথা বলছিলাম সেখানে ফিরে আসি। গান শুনছিলাম, এখনো শুনছি। তবে এখন শুনছি গজল তাও আবার জগজিৎ সিং এর। তাও আবার প্রিয় একটা গান, সরকতি যায়ে রুখ সে নাকাব আহিস্তা আহিস্তা, নিকালতা রাহা হে আফতাব আহিস্তা আহিস্তা। সুরটা প্রচন্ড প্রিয়। তবে একটা গানেই বার বার আমি আটকে যাই,
এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুল গুলি ঝরে,
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি তোমার চরনে দিয়েছি….
কি কারনে জানি না তবে রবিঠাকুরের এই গানটা আমার খুব ভাল লাগে। চেষ্টা করি একবার হলেও শুনতে। মন খারাপ বা কোনকিছু করতে পারছিনা তখনি আমার আশ্রয় রবিঠাকুর। আজকে গানটা শুনতে শুনতে অনেক পিছনে চলে গিয়েছিলাম। মনে পরে গিয়েছিল প্রথম ভাললাগার কথা। সেকথা না হয় পরে অন্যকোন একদিন শোনাব আপনাদের। কি যে জাদু আছে রবিঠাকুরের লেখায় আমি জানি না। কিন্তু চুম্বকের মত খালি আমকে টেনে ধরে। বাঙ্গালী মাত্রেই মনে হয় রবিঠাকুর টানে।
পড়তে বসেছি কিন্তু চোখের সামনে ফেসবুকের পেইজ টা খোলা। বন্ধুদের বসন্তের ছবি গুলো দেখছিলাম। খুবই সুন্দর!
এর মাঝে আমরা রুমমেটরা বই নিয়ে সমালোচনা করে গেলাম। কোন বই কেমন! এভাবেই চলে গেল আরো একটা দিন!
অথচ ব্যস্ত দিন গুলোতে কি যে কষ্ট হয়! ক্লাস, পড়া, পরীক্ষা। কিন্তু সপ্তাহ শেষের দিন গুলো এলেই আমার কেন জানি ভাল লাগে না। খালি ঘুম আসে। আমার এক রুমমেটতো প্রায়ি বলে, কি আছে জীবনে এই ঘুম ছাড়া! শুনে আমরা হাসলেও কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। ঘুম, কাজ, ছুটে চলা প্রতি মুহুর্তে আর খাওয়া এই হল আমাদের জীবন। তারপরেও একটু হাসি একটু কান্না, একটু বিষন্নতা, টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা, মজা যেন বেঁচে থাকার লোভকে বাড়িয়ে দেয় হাজার গুন!

No comments: